বায়ুর ক্ষয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ গুলি চিত্রসহ আলোচনা করো ?
Q1.বায়ুর ক্ষয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ গুলি চিত্রসহ আলোচনা করো ?
বায়ুর ক্ষয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ গুলি হল-
1.ইয়ারদাং:
বায়ুর গতিপথে খাড়াভাবে অবস্থানরত কঠিন ও কোমল শিলাস্তর বায়ুবাহিত বালিকণার অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে বিচিত্র আকৃতির শিলাস্তূপ গঠন করে সে গুলোকে ইয়ারদাং বলে ৷ইয়ারদাং এর শীর্ষ দেশ ক্ষয় হয়ে তীক্ষ্ণ আকার নিলে তাকে নিডিল বলে ৷

বৈশিষ্ট্য:
i.কঠিন শিলা পর্যায়ক্রম উলম্বভাবে অবস্থান করে।
ii.মোরগের ঝুটির মতো দেখতে হয়।
iii.শিলাস্তরে সমান্তরাল বায়ু প্রবাহিত হয়ে গঠিত হয়।
2.জিউগেন:
মরু অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলা দ্বারা গঠিত কোন স্বাস্থ্য বায়ুপ্রবাহের আড়াআড়িভাবে অবস্থান করলে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় কোমল শিলা বেশি এবং কঠিন শিলা কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয় চ্যাপ্টা ও সমতল শীর্ষ দেশ যুক্ত পরস্পর সমান্তরাল টিলার মতো ভূমিরূপ সৃষ্টি করে তাকে জিউগেন বলে ৷

বৈশিষ্ট্য:
iকঠিন শিলা পর্যায়ক্রমে অনুভূমিকভাবে অবস্থান করে।
ii.মাথা প্রায় সমতল চূড়ার মত চ্যাপ্টা হয়।
3.গৌর:
বায়ুর গতিপথে কোন কঠিন ও কোমল শিলায় গড়া শিলাস্তুপ অবস্থান করলে নিচের কোমল অংশে বায়ু ক্ষয় কাজের তীব্রতা বেশি হওয়ার জন্য শিলাস্তুপটির নিচের অংশ বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং সরু স্তম্ভের মত হয় এবং উপরের কম ক্ষয় প্রাপ্ত কঠিন শিলায় স্তরটি বিরাট আয়তন নিয়ে ব্যাঙের ছাতার মত দাঁড়িয়ে থাকে এইরকম স্তম্ভাকৃতি ব্যাঙের ছাতার ন্যায় শিলাস্তুপকে গৌর বলে ৷

বৈশিষ্ট্য:
i.কোমল শিলার উপর কঠিন শিলার অবস্থান করে।
ii.এ ধরনের ভূমিরূপ কে Mushroom Rock বলে বলে।
4.ইনসেলবার্জ:
শুষ্ক মরু অঞ্চলে ক্ষয়কার্যের ফলে অনেক সময় কঠিন শিলা গঠিত মসৃণ ও অবতল ঢাল বিশিষ্ট হয়ে টিলা কারে অবস্থান করে এদের ইনসেলবার্জ বলে ৷কালাহারি ,অস্ট্রেলিয়া, আরব মরুভূমিতে দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য:
i.শুষ্ক মরু অঞ্চলে অবশিষ্ট শক্ত শিলা দ্বারা গঠিত পাহাড়।
ii.ইনসেলবার্জ দেখতে গম্বুজাকার হয়ে থাকে।
iii.ইনসেলবার্জ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে আকারে ছোট হলে টর বলে ডাকা হয়।
5.ভেন্টিফ্যাক্ট:
উষ্ণ ও শুষ্ক মরু অঞ্চলে সারাবছর ধরে একটি নির্দিষ্ট দিক থেকে নিয়ত বায়ুপ্রবাহের ফলে প্রস্তরখন্ডের প্রতিবাত অংশটি অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মসৃণ হয় এবং বাকি অংশগুলো অমসৃণ হয় ৷ যা দেখতে ব্রাজিল নাটের মতো এইরূপ শিলাখণ্ড ভেন্টিফ্যাক্ট বলে ৷কালাহারি মরুভূমিতে দেখা যায় ৷
6.ড্রেইকান্টার:
উষ্ণ ও শুষ্ক মরু অঞ্চলে বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্নমুখী বায়ুপ্রবাহের ফলে প্রস্তরখন্ডের বিভিন্ন দিক অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে তিনটি সূচালো ও মসৃণ প্রান্ত যুক্ত শিলাখণ্ড গঠিত হয় একে ড্রেইকান্টার বলে৷ সাহারা মরুভূমিতে এটি দেখা যায় ৷
7.মেসা ও বিউট:
মরু অঞ্চলে ক্ষয়কার্যের ফলে টেবিল আকৃতির ভূমিরূপ সৃষ্টি হলে তাকে মেসা বলে ৷মেসা গুলি আরো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে আকৃতিতে ক্ষুদ্র হলে তাকে বিউট বলে ৷
Q2.ইয়ারদাঙ ও জিউগেনের মধ্যে পার্থক্য লেখ ৷
বিষয় | ইয়ারদাঙ | জিউগেন |
শিলার অবস্থান | কঠিন ও কোমল শিলাস্তর পর্যায়ক্রমে উল্লম্বভাবে থাকে। | এতে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর অনুভূমিকভাবে থাকে। |
আকৃতি | এটি মোরগের ঝুঁটির মতো দেখতে এবং মাথা ছুঁচোলো | এটি টেবিলের মতো দেখতে এবং মাথা চ্যাপটা। |
ঢাল | এর দুপাশ অসমান ঢালযুক্ত ও অপ্রতিসম প্রকৃতির। | এর দুপাশ সমান ঢালযুক্ত ও অপ্রতিসম প্রকৃতির। |
উচ্চতা | উচ্চতা কম হয়, গড়ে ৭ মি। | এর উচ্চতা বেশি হয়, ২-৪০ মিটার। |
বায়ু | এতে বায়ু শিলাস্তরের সমান্তরালে প্রবাহিত হয়। | বায়ু শিলাস্তরের সঙ্গে যেকোনোভাবে প্রবাহিত হয়। |
Q3.অপসারণ গর্ত (blowouts) কী?
Ans: বায়ুর ক্ষয়কার্যের অপসারণ (deflation) প্রক্রিয়ায় অপসারণ গর্ত সৃষ্টি হয়। মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের অভাবে বালিকণা সমূহ শিথিল অবস্থায় থাকার জন্যে বায়ু তার প্রবল গতির দ্বারা ওই বালিকণা সমূহকে অন্যত্র অপসারিত করে নীচু অবনত অঞ্চল বা অপসারণ গর্তের সৃষ্টি করে। এদেরকে ধান্দও বলা হয়। মিশরের পশ্চিমে কাতারা পৃথিবীর বৃহত্তম অপসারণ গর্ত।
Q4.গৌর (Gour or Garas) কী?
Ans: বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়ার দ্বারা সৃষ্ট ব্যাঙের ছাতার মতো ভূমিরূপকে গৌর বলে। মরু অঞ্চলে ভূমি থেকে ১ মিটারের মধ্যবর্তী অংশে বায়ুতে বালিকণার পরিমাণ ও গতিবেগ বেশি থাকে। অন্যদিকে ১ মিটারের ঊর্ধ্বে বায়ুতে বালিকণার পরিমাণ কম থাকার জন্য অবঘর্ষ কম হয় ও ভূমিতে বায়ুর গতি ভূমিঘর্ষণে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে বায়ুর গতিপথে কোনো উঁচু প্রস্তরখণ্ড থাকলে তার ভূমিদেশের ও ওপরের অংশ কম ক্ষয় হয়ে চওড়া থাকে। অন্যদিকে প্রস্তর খন্ডের মধ্যবর্তী অংশে বেশি মাত্রায় অবঘর্ষ ক্ষয়ের ফলে সরু হয়। আফ্রিকার সাহারা মরুভূমিতে গৌর দেখা যায়।
Q5.পিয়াংকিয়াং গর্ত (Piang Kiang Hollow) কী?
উত্তর: মরু অঞ্চলে শিথিল বালিরাশি স্থানান্তরিত হয়ে স্থানটি ক্রমশ অবনমিত হয়ে প্রায় 5 মাইল চওড়া, 200-400 ফুট গভীর গ্রানাইট পাতালিক শিলাগঠিত বিশালাকার অবনমিত গর্তগুলিকে বিজ্ঞানী বার্কে ও মরিস মঙ্গোলিয়ায় পিয়াংকিয়াং গর্ত বলেছেন।
Q6.ডেজার্ট পেভমেন্ট (Desert Pavement) কাকে বলে?
উত্তর: উয় শুষ্ক মরু অঞ্চলে নুড়ি ও প্রস্তরখণ্ড আবৃত অবনমিত ভূমি অর্থাৎ ডিফ্রেশন আর্মার থেকে কিছু ছোটো ছোটো শিলাকণা বায়ুপ্রবাহ দ্বারা অপসারিত হলে শিলাখণ্ডের স্তরগুলি অতি ঘন সংঘবদ্ধ হয়। মনে হয় যেন হাতুড়ির আঘাত দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। একে ডেজার্ট পেভমেন্ট বলে। সাহারায় এইরূপ মরুভূমিকে রেগ বলে।
Q7.ডিফ্লেশন আর্মার (Deflation Armour) কাকে বলে?https://webbhugol.com/glacio-fluvial-landform/
উত্তর: উয় শুষ্ক মরু অঞ্চলে প্রবল বায়ুপ্রবাহ দ্বারা হালকা ও সূক্ষ্ম বালিকণা দ্রুত অপসারিত হয় এবং নুড়ি ও বৃহৎ প্রস্তরখণ্ড তলদেশে সঞ্চিত থাকে। পরিশেষে সমগ্র স্থানটি অবনমিত হলে ওই নুড়ি ও প্রস্তরখণ্ডের আস্তরণ ভূমিকে অপসারণ ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। একে ডিফ্লেশন আর্মার বলে। সাহারায় এই মরুভূমিকে হামাদা বলে।
Q8.ইনসেলবার্জ (Inselberge) কী বা মরুস্তম্ভ কীভাবে গড়ে ওঠে?
উত্তর: উয় শুষ্ক মরু অঞ্চলে বায়বীয় ক্ষয়চক্রের শেষাবস্থায় বৈচিত্রহীন সমতল ভূমিতে গ্রানাইট ও নিস্ শিলাগঠিত, অনুচ্চ, খাড়া ঢালু, মসৃণ গাত্রযুক্ত, প্রায় গোলাকার, ক্ষয়ীভূত অবশিষ্ট পাহাড়কে জার্মান ভাষায় ইনসেলবার্জ বলে। যথা অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমিতে মাউন্ট ওলগা। দীর্ঘকাল ধরে মরু অঞ্চলে তীব্র শল্কমোচন আবহবিকার দ্বারা শিলাস্তূপের ওপরে স্তরগুলি বিমোচিত হয় এবং প্রবল বায়ুপ্রবাহ দ্বারা শিলাচূর্ণ অপসারিত হয়ে এই অবশিষ্ট পাহাড়টি গড়ে ওঠে।
Q9.বায়ুর ক্ষয়জাত ভূমিরূপগুলি কী কী?
উত্তর: (a) অপসারণ ক্ষয়জাত ভূমিরূপ: (ⅰ) ডিফ্লেশন গর্ত, (ii) পিয়াংকিয়াং গর্ত, (iii) ডিফ্লেশন আর্মার, (iv) ডেজার্ট আর্মার’, (v) ল্যাগ ডিপোজিট, (vi) মিলেট সিড স্যান্ড।
(b) অবঘর্ষ ক্ষয়জাত ভূমিরূপ: (i) ভেন্টিফ্যাক্ট, (ii) ড্রেইকান্টার, (iii) ইয়ার্দাং, (iv) জুগ্যান, (v) গৌর, (vi) ডিমোেইশেলি, (vii) ইনসেলবার্জ, (viii) গ্রুভ, (ix) ফারো, (x) পেডিমেন্ট
বায়ুর সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ গুলি চিত্রসহ আলোচনা করো ?👉 Click Here
হিমবাহের কাজ দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ👉 Click Here
হিমবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ গুলি আলোচনা করো I👉 Click Here
নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট Webbhugol.com ফলো করুন।
Please Share