আপনি কি জানেন পৃথিবীর একমাত্র কার্বন নেগেটিভ (CARBON NEGATIVE) দেশ হল ভুটান?
★ আসলে কার্বন নেগেটিভ(CARBON NEGATIVE) বিষয়টা কি?
বায়ুমন্ডলে উপস্থিত কার্বন ডাই অক্সাইড একটি গ্রীনহাউস গ্যাস, অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের তাপ ধরে রাখতে সাহায্যকারী অন্যতম গ্যাস।বায়ুমণ্ডলে যার পরিমাণ রয়েছে 0.03%(পরিবর্তনশীল) । এছাড়া মানুষ নানাবিধ কর্মকাণ্ডের দ্বারা বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলছে। যেমন- আমাদের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন পর্যন্ত প্রায় সব কিছুতেই কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে। আমরা জানি গাছে কার্বন শোষণ করে কিন্তু বর্তমানে বৃক্ষছেদন এত বেশি হচ্ছে যে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন বেশি হয় কিন্তু শোষণ কম হয়, এ কারণে পরিবেশে কার্বনের পরিমাণ বেড়েই চলেছে আর এটা বিশ্ব উষ্ণায়নের সবচেয়ে বড় কারণ I

বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কার্বন কমানোর চেষ্টায় লেগে আছে আর অন্যদিকে ভুটান পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্নের থেকে শোষণ বেশি হয়। তথ্য অনুযায়ী ভুটান প্রায় 7 মিলিয়ন টন কার্বন প্রতিবছর শোষণ করে আর প্রায় 2 মিলিয়ন টন কার্বন প্রতিবছরে উৎপন্ন করে। ফলে ভূটান CARBON NEGATIVE.
👉 কিন্তু ভুটান এমনটা করল কিভাবে?
ভুটান কার্বন নেগেটিভ দেশ হওয়ার পেছনে সেখানকার অধিবাসীদের সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় বিষয়টিকে সম্ভব করে তুলেছে। ভুটানের প্রতিটি অধিবাসী প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ভুটানের 4th রাজা ‘Jigme Singye Wangchuck’ বলতেন “Gross National Happiness is more important than Gross Domestic products” তারপর থেকে ভুটানের যেকোনো উন্নয়ন মূলক কাজের ক্ষেত্রে Gross Happiness এর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর জন্য পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন-
🌿বনভূমি আচ্ছাদন:-🌴
প্রত্যেকের জানা বিষয় বনভূমি অর্থাৎ স্বাভাবিক উদ্ভিদ কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন প্রদান করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পার্বত্যময় ভুটানের প্রায়ই 70 শতাংশের বেশি অঞ্চল বনভূমি আচ্ছাদিত আর এটা হল কার্বন নেগেটিভ হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ। এমনকি ভুটানের সংবিধানে উল্লেখ আছে বনভূমির পরিমাণ কোনো সময় যেন 60 শতাংশের কম না হয়।
🐘🐻🐇🐆বায়োলজিক্যাল করিডোর :-🐛🐌🕊🐝🐿
আগেই বলেছি ভুটানের লোক উন্নয়নের ক্ষেত্রে জীবনের সঙ্গে সহাবস্থানকে (Coexistence) বেশি গুরুত্ব দেয়।পার্বত্য ভুটানের যথেষ্ট জীববৈচিত্র্যপূর্ণ ফলে এখানে নানান ধরনের পশু-পাখি লক্ষ্য করা যায়। মানুষের সুবিধা সৃষ্টির জন্য কোনভাবে যেন জীব বৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে না যায় তা যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর জন্য এক বনভূমির সাথে অন্য বনভূমিকে বায়োলজিক্যালস করিডর দ্বারা যুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে বন্যপ্রাণী স্বচ্ছন্দে পুরো দেশে ঘুরে বেড়ায়।

🏭বিদ্যুৎ উৎপাদন ও দূষণ নিয়ন্ত্রন :-🏭
প্রতিটা দেশের আর্থসামাজিক দিক উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে বিদ্যুৎ শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিদ্যুৎ শক্তির উৎস হিসেবে অন্য দেশে যেখানে তাপবিদ্যৎ এর উপর বেশি নির্ভরশীল সেখানে ভুটান জলবিদ্যুৎ এর উপর নির্ভরশীল যার ফলে দূষণ হয় না। এছাড়া ভুটানে চাষীদের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় কারণ খাবার তৈরীর জন্য তাদের যেন কাঠ বা কয়লা ব্যবহার না করতে হয়।
🌱🌳বৃক্ষরোপণ :-🌴🌳
একটি গাছ একটি প্রাণ এটা প্রত্যেকের জানা। ভুটান নিজেকে অন্যভাবে গড়ে তুলতে বৃক্ষরোপণ বিষয়টাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। পাহাড়ি ভুটান চারিদিক গাছপালা দিয়ে ঘেরা। কিন্তু এমনটা কিভাবে সম্ভব হল? তার একটি মাত্র দৃষ্টান্ত হলো- 2016 সালে ভুটানের রাজপুত্রের জন্মদিনে 1 লক্ষ 8 হাজার গাছ লাগানো হয়। এছাড়া 2015 সালে এক ঘন্টায় 49 হাজার 672 টি গাছ লাগিয়ে ভুটান গিনেস বুকে নিজের নাম তুলে নেয়।
👉👉👉 পরিশেষে এটাই বলার ভুটান কার্বন নেগেটিভ দেশ হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বউষ্ণায়নের শিকার, কারণ সে নিজে নয়, পাশ্ববর্তী বাকী দেশ গুলি যেমন উত্তরে ‘চীন’ কার্বন উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম এবং দক্ষিণে ‘ভারতে’ যা বিশ্বে কার্বন উৎপাদনে তৃতীয়। বিগত বছরগুলি থেকে দেখা যায় যে ভুটানের হিমবাহের গলনের বৃদ্ধির জন্য আকস্মিক বন্যা ও প্রায়ই ভূমি ধসের ঘটনা ঘটেই চলেছে তার কারণ বিশ্ব উষ্ণায়ন, যার জন্যে ভূটান 1শতাংশ দায়ী নয়। পরিবেশ সচেতনতা সকলের প্রয়োজন। আমরা বা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যদি ভূটানকে দেখে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হই বিশ্বউষ্ণায়ন রোধ হবেই, পরিবেশ সুস্থায়ী হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রকৃতি আমাদের জননী।
এরকম নানান অজানা তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট Webbhugol.com টি ফলো করুন। আমাদের পোস্টে কোন ভুল ভ্রান্তি থাকলে তা কমেন্টের বা যোগাযোগের মাধ্যমে বিষয়টি জানালে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব । ভূগোল বিষয়ের সকলকে উৎসাহী ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য ।