MP GEOGRAPHY

বায়ুর সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ গুলি চিত্রসহ আলোচনা করো ?

বায়ুর সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ
বায়ুর সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ

Ans: বায়ুর অবক্ষেপন ও সঞ্চয় কার্যের ফলে বিভিন্ন ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় ৷ যথা-

1.বালিয়াড়ি: কোন উচ্চভূমি ঝোপঝাড় বা বড় পাথর খণ্ডের অবস্থানের ফলে বায়ু প্রবাহের গতি বাধাপ্রাপ্ত হলে বায়ুবাহিত বালির কিছু অংশ সেখানে সঞ্চিত হয়ে বালির স্তুপ গঠন করে ৷বিস্তীর্ণ স্থান জুড়ে সঞ্চিত উঁচু ও দীর্ঘ এই বালির স্তুপ কে বালিয়াড়ি বলে ৷ যেমন- দীঘা বালিয়াড়ি ৷

বৈশিষ্ট্য:
i.বালিয়াড়ি দেখতে উঁচু ঢিবির মত।
ii.বায়ুর প্রবাহ পথে বাধা পেয়ে বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয়।
iii.উষ্ণ মরু অঞ্চল ও সমুদ্র উপকূলে লক্ষ্য করা যায়।

বায়ুপ্রবাহের গতিপথের সম্পর্কের ভিত্তিতে বিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড দুই প্রকার বালিয়াড়ির চিহ্নিত করেন –
i.তির্যক বালিয়াড়ি বা বার্খান:
বার্খান একটি তুর্কি শব্দ যার অর্থ বালির পাহাড় ৷ উষ্ণ মরু অঞ্চলে বায়ুর গতিপথে সঙ্গে আড়াআড়িভাবে গঠিত অর্ধচন্দ্রাকৃতি বালিয়াড়ি কে তির্যক বা বার্খান বালিয়াড়ি বলে ৷

তির্যক বালিয়াড়ি বা বার্খান
তির্যক বালিয়াড়ি বা বার্খান

বৈশিষ্ট্য:
i.দেখতে অর্ধচন্দ্রাকৃতি দুটি শিং এর মত বিস্তৃত থাকে।
ii.বারখান পরিবর্তিত হয়ে সিফ বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয়।

ii.অনুদৈর্ঘ্য বা সিফ বালিয়াড়ি:
সিফ একটি আরবি শব্দ যার অর্থ সোজা তরবারি ৷
বায়ুপ্রবাহের সমান্তরালে দীর্ঘ ও সংকীর্ণ শৈলশিরার মতো দেখতে বালির পাহাড়কে সিফ বালিয়াড়ি বলে ৷

অনুদৈর্ঘ্য বা সিফ বালিয়াড়ি
অনুদৈর্ঘ্য বা সিফ বালিয়াড়ি

বৈশিষ্ট্য:
i.সিফ শব্দের অর্থ সোজা তলোয়ার।
ii.বায়ু প্রবাহের সাথে সমান্তরালে অবস্থান করে। বারখান পরিবর্তিত হয়ে সিফ বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয়।
iii.এগুলো দৈর্ঘ্য ১০০ থেকে ১৫০ কিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে I

2.লোয়েস সমভূমি:
বায়ুবাহিত অতিসূক্ষ বালিকণা, মৃত্তিকা কণা প্রভৃতি বায়ুর অপসারণ প্রক্রিয়ায় দ্বারা উৎস অঞ্চল থেকে উড়ে গিয়ে বহুদূরে কোন স্থানে অধঃক্ষিপ্ত হয়ে যে সমভূমি গঠন করে তাকে লোয়েস সমভূমি বলে ৷উদাহরণ গোবি মরুভূমি বালি উড়ে এসে বিশ্বের বৃহত্তম লোয়েস সমভূমি গঠিত হয়েছে চীনের হোয়াংহো নদী অববাহিকা অঞ্চলে ৷

বিষয়বার্খান বালিয়াড়ি (Barkhan)সিফ বালিয়াড়ি ( Seif)
অর্থ‘Barkhan’ তুর্কি শব্দ ‘Barkan’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘ ‘বালির পাহাড়’।Seif’ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘তরবারি’।
উৎপত্তিবায়ুর গতিপথের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে বা লম্বভাবে গড়ে ওঠে।বায়ুর গতিপথের সঙ্গে সমান্তরালে গঠিত হয়।
আকৃতিঅর্ধচন্দ্রের মতো আকৃতিযুক্ত।সোজা তরবারির মতো দীর্ঘ ও সংকীর্ণ হয়।
গঠনবায়ুপ্রবাহের দিক উত্তল ঢালবিশিষ্ট এবং বিপরীত দিক অবতল ঢালবিশিষ্ট।বায়ুপ্রবাহের উজানের দিকটি উঁচু ও গোলাকার এবং ভাটির দিকটা ক্রমশ নীচু হতে হতে হঠাৎ শেষ হয়ে যায়।
বৈশিষ্ট্যদু-দিকে অর্ধচন্দ্রাকারে দুটি শিং-এর মতো শিরা দেখা যায়।কোনো শিং-এর মতো শিরা না থাকলেও এদের শিখরদেশ করাতের দাঁতের মতো খাঁজকাটা।
বিষয়পেডিমেন্ট (Pediment)বাজাদা (Bajada)
সংজ্ঞাবায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে মরু অঞ্চলে পর্বতের পাদদেশে যে প্রস্তরময় সমতল ভূমি সৃষ্টি হয়, তাকে পেডিমেন্ট বলে।বায়ু ও জলধারার সঞ্চয়কার্যের ফলে মরু অঞ্চলে পর্বতের পাদদেশে যে বালুকাময় সমতল ভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে বাজাদা বলে।
উৎপত্তিআবহবিকার, বায়ু ও জলধারার মিলিত ক্ষয় ও সঞ্চয় কার্যের দ্বারা সৃষ্টি হয়।বায়ু ও জলাধারার মিলিত সঞ্চয়কার্যের দ্বারা সৃষ্টি হয়।
গঠননুড়ি, বালি, পাথর দ্বারা গঠিত।সূক্ষ্ম বালি, কাদা দ্বারা গঠিত।
ঢালপেডিমেন্টের ঢাল অপেক্ষাকৃত বেশি (6° -7°)।বাজাদার ঢাল কম হয় (3°-4°)।
প্রকৃতিঅবতল প্রকৃতির হয়।উত্তল প্রকৃতির হয়।

লোয়েশ (Loess): প্রবল বায়ুপ্রবাহের দ্বারা মরু অঞ্চলের সূক্ষ্ম বালিকণা বাহিত হয়ে বহুদূরে নীচু অঞ্চলে সঞ্চিত হলে, তাকে বালিয়াড়িতে পরিণত হওয়া লোয়েশ বা লোয়েশ সমভূমি বলে। ভূবিজ্ঞানীরা লোয়েশ সৃষ্টির কারণ হিসেবে মরু অঞ্চলে বালিকণার পরিমাণ ও বায়ুর প্রবল গতিবেগকে গুরুত্ব দিলেও কেউ কেউ হিমবাহের প্রান্তদেশে সঞ্চিত গ্রাবরেখা, বহির্ধোত সমভূমি অঞ্চলে সঞ্চিত সূক্ষ্ম পদার্থসমূহকে হিমবাহ অঞ্চলের বহির্দেশে সঞ্চয়ের কথা বলেছেন। বায়ু সঞ্চিত বাল সোম মৃত্তিকা নদী সঞ্চিত লোয়েস মৃত্তিকা মধ্যএশিয়ায় গোবি মরুভূমি থেকে বালি-কণা বাহিত হয়ে চিনের হোয়াংহো অববাহিকায় পীতবর্ণের বিস্তীর্ণ হোয়াংটু সমভূমির সৃষ্টি করেছে। এছাড়া, উত্তর আমেরিকার মিসিসিপি-মিসৌরি নদী উপত্যকায়, ইউরোপের রাইন নদী উপত্যকায় লোয়েশ দেখা যায়।

উত্তর: উষ্ম শুষ্ক মরু অঞ্চলে প্রবল বায়ুপ্রবাহের ফলে বালিয়াড়ির বালিরাশি একস্থান থেকে অন্যস্থানে সরে যায়। ফলে বালিয়াড়ি গতিশীল হয়। এরূপ বালিয়াড়িকে চলমান বা অস্থায়ী বালিয়াড়ি বলে। ভারতের থর মরুভূমিতে এইরূপ চলমান বা অস্থিতিশীল বালিয়াড়িকে ধ্রিয়ান বলা হয়।

উত্তর: (i) প্রথমে একটি নির্দিষ্ট দিক থেকে নিয়মিত বায়ুপ্রবাহের ফলে পরপর একাধিক অর্ধচন্দ্রাকার বালিয়াড়ি বা বার্খান গড়ে উঠে। (ii) এরপর বিভিন্ন দিক থেকে শক্তিশালী বায়ু প্রবাহের জন্য বার্খানের মাঝের অংশ ক্ষয় পেয়ে দুপাশের শিং-এর মতো শিরা দুটি দৈর্ঘ্যে প্রসারিত হয় এবং বায়ুর সঙ্গে সমান্তরালভাবে অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে। (iii) পরপর কয়েকটি বার্খান থাকলে তাদের মধ্যবর্তী স্থানে সংকীর্ণ করিডরসহ অনেকগুলি সিফ্ বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে।

উত্তর: বিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড চিহ্নিত বার্খান বালিয়াড়ির বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
(i) এগুলি বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে অবস্থান করে।
(ii) বালিয়াড়িটি দেখতে অর্ধচন্দ্রকার।
(iii) প্রতিবাত অংশ উত্তল এবং অনুবাত ঢাল এটি গড়ে অবতল প্রকৃতির হয়।
(iv) দুই প্রান্তে দুটি শিং-এর মতো শিরা নিম্নমুখী হয়ে অবস্থান করে।
(v) এগুলি সর্বদাই অস্থায়ী বা গতিশীল।
(vi) উচচতা 15-30 মি. এবং প্রস্থ 40-70 মি. হয়।

Ans: অর্থ: ‘Seif’ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘তরবারি’ (Sword)।

সংজ্ঞা: বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে সমান্তরালে গঠিত দীর্ঘ ও সংকীর্ণ বালির শৈলশিরাকে সিফ বালিয়াড়ি বলে।

বৈশিষ্ট্য: i.দৈর্ঘ্য: 100 থেকে 150 কিমি;

ii.উচ্চতা: উচ্চতা 100 মিটারের বেশি;

iii.আকৃতি – তরবারির ন্যায় এই বালিয়াড়ির গোড়ার দিকটি উঁচু ও গোল হয় এবং প্রান্তভাগটি ক্রমশ নীচু হতে হতে ছুঁচোলো আকার ধারণ করে; শিখর- এদের শিখর রেখাটি করাতের দাঁতের মতো উঁচুনীচু হয়;

iv.করিডর – দুটি সিফের মধ্যবর্তী নীচু অংশকে করিডোর বা গাসি বলে । এগুলি একে অপরের সমান্তরালে গড়ে ওঠে।

Please Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!