পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু: ঋতুভেদ, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর (West Bengal Climate Notes & Top MCQ)

পশ্চিমবঙ্গ এমন একটি রাজ্য যার উত্তরে হিমালয় পর্বত এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। এই ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে এখানকার জলবায়ুতেও বেশ তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। তবে সামগ্রিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুকে ‘ক্রান্তীয় উষ্ণ-আর্দ্র মৌসুমি’ (Tropical Monsoon Climate) প্রকৃতির বলা হয়। কর্কটক্রান্তি রেখা এই রাজ্যের মাঝ বরাবর (পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান এবং নদিয়া জেলার ওপর দিয়ে) বিস্তৃত হওয়ায় এখানকার আবহাওয়ায় গ্রীষ্মকালের প্রাধান্য বেশি থাকে।

পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর প্রধান নিয়ন্ত্রকসমূহ

যেকোনো অঞ্চলের জলবায়ু কতগুলো নির্দিষ্ট কারণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে প্রধান কারণগুলি হলো:

1. ভৌগোলিক অবস্থান ও অক্ষাংশ: কর্কটক্রান্তি রেখার উপস্থিতি।
2. হিমালয় পর্বতের অবস্থান: উত্তরের হিমালয় পর্বত উত্তরের শীতল সাইবেরীয় বাতাসকে বাধা দেয় এবং জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে বাধা দিয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
3. বঙ্গোপসাগরের সান্নিধ্য: সমুদ্রের কাছে অবস্থিত হওয়ায় দক্ষিণের জেলাগুলিতে সমভাবাপন্ন জলবায়ু বিরাজ করে।
4. মৌসুমি বায়ু: এই রাজ্যের বৃষ্টিপাত এবং ঋতু পরিবর্তন মূলত মৌসুমি বায়ুর আসা-যাওয়ার ওপরই নির্ভর করে।

---

পশ্চিমবঙ্গের ঋতু বৈচিত্র্য (Seasons of West Bengal)

ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের (IMD) হিসাব অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুকে প্রধানত চারটি ঋতুতে ভাগ করা যায়:

১. গ্রীষ্মকাল (Summer Season)

• সময়কাল: মার্চ মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত।
• বৈশিষ্ট্য: এই সময় সূর্য উত্তর গোলার্ধে কর্কটক্রান্তি রেখার দিকে এগোতে থাকে, ফলে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এপ্রিল-মে মাসে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম ও পশ্চিম মেদনীপুরের তাপমাত্রা প্রায় ৪০°C – ৪৫°C পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
• লু (Loo): পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে দুপুরের দিকে অত্যন্ত গরম বাতাস প্রবাহিত হয়, যাকে ‘লু’ বলা হয়।
• কালবৈশাখী (Nor’westers): গ্রীষ্মকালে বিকেলের দিকে ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে এক প্রকার প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়। একে ‘কালবৈশাখী’ বলা হয়। এই বৃষ্টি চা ও পাট চাষের জন্য উপকারী।

২. বর্ষাকাল (Monsoon Season)

• সময়কাল: জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত।
• বৈশিষ্ট্য: জুনের ৮-১০ তারিখের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগরীয় শাখা পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে। একে ‘মৌসুমি বিস্ফোরণ’ বলা হয়।
• বৃষ্টিপাত: এই সময় রাজ্যে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ বৃষ্টি হয়। উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে সবথেকে বেশি বৃষ্টি হয়।

৩. শরৎকাল (Autumn Season)

• সময়কাল: অক্টোবর ও নভেম্বর মাস।
• বৈশিষ্ট্য: এই সময় মৌসুমি বায়ু পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিদায় নিতে শুরু করে। আকাশ সাধারণত মেঘমুক্ত থাকে।
• আশ্বিনের ঝড় (Cyclones): প্রত্যাগমনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন সৃষ্টি হয়, যা ‘আশ্বিনের ঝড়’ নামে পরিচিত।

৪. শীতকাল (Winter Season)

• সময়কাল: ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস।
• বৈশিষ্ট্য: এই সময় উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয় যা শুষ্ক ও শীতল। জানুয়ারি হলো শীতলতম মাস।
• পশ্চিমী ঝঞ্ঝা (Western Disturbance): শীতকালে মাঝে মাঝে ভূমধ্যসাগর থেকে আগত দুর্বল ঘূর্ণবাত বা পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে রাজ্যে হালকা বৃষ্টিপাত হয়, যা রবিশস্য (যেমন- গম) চাষের জন্য খুব ভালো।

📌একনজরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (Quick Facts)

তথ্যের বিষয়	স্থানের নাম/বিবরণ
সর্বাধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থান	বক্সা ডুয়ার্স (আলিপুরদুয়ার)
সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থান	ময়ূরেশ্বর (বীরভূম)
উষ্ণতম স্থান	তোড়াং (পুরুলিয়া) / আসানসোল
শৈলশহর	দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং
জলবায়ুর প্রকৃতি	ক্রান্তীয় মৌসুমি

ঋতু	সময়কাল	প্রধান বৈশিষ্ট্য
গ্রীষ্মকাল	মার্চ – মে	অসহ্য গরম, কালবৈশাখী
বর্ষাকাল	জুন – সেপ্টেম্বর	আর্দ্রতা, ভারী বৃষ্টিপাত
শরৎকাল	অক্টোবর – নভেম্বর	নির্মল আকাশ, আশ্বিনের ঝড়
শীতকাল	ডিসেম্বর – ফেব্রুয়ারি	শুষ্ক আবহাওয়া, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা

🎓ক্যুইজ পর্ব: পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু (20 MCQ)

নিচে ২০টি গুরুত্বপূর্ণ বহুবিকল্পীয় প্রশ্ন (MCQ) দেওয়া হলো যা মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার (WBCS, WB Police, WBSSC, PSC, TET, Group-D , Group-C, PSC Clerkship) জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই পোস্টে দেওয়া ২০টি পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু MCQ তোমার চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে নির্ভরযোগ্যভাবে সহায়ক হবে। জলবায়ু পশ্চিমবঙ্গ ভূগোলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, তাই নিয়মিত পুনরাবৃত্তি ও কুইজ প্র্যাকটিস করলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
আরও MCQ পোস্ট পেতে WebBhugol-এ চোখ রাখো।

• পশ্চিমবঙ্গের নদ-নদী
• পশ্চিমবঙ্গের ভূপ্রকৃতি

FAQ Section:

Please Share