ভারতের জনসংখ্যা ও জনগণনা ২০১১: সম্পূর্ণ নোট ও প্রশ্ন-উত্তর (মাধ্যমিক ও WBCS)

ভূমিকা:

ভারতের ভূগোল এবং অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলো ভারতের বিশাল জনসংখ্যা। দশম শ্রেণির মাধ্যমিক পরীক্ষা হোক বা যেকোনো সরকারি চাকরির প্রস্তুতি, ‘ভারতের জনসংখ্যা’ অধ্যায়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ২০১১ সালের আদমশুমারি (Census 2011) অনুযায়ী ভারতের জনসংখ্যার বিস্তারিত তথ্য, জনঘনত্ব, স্বাক্ষরতা এবং লিঙ্গ অনুপাত etc. গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

​১. ভারতের জনসংখ্যা: একনজরে (Key Highlights of Census 2011)

​২০১১ সালের জনগণনা বা সেন্সাস ছিল ভারতের ১৫তম আদমশুমারি। নিচে এর প্রধান তথ্যগুলি দেওয়া হলো:

• ​মোট জনসংখ্যা: প্রায় ১২১.০২ কোটি (বর্তমানে তা ১৪০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে, তবে পরীক্ষার জন্য ২০১১-এর তথ্যই প্রামাণ্য)।
• ​বিশ্বে ভারতের স্থান: জনবহুল দেশ হিসেবে দ্বিতীয় (বর্তমানে রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রথম)।
• ​বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ভাগ: ভারতের জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৭.৫%।
• ​দশকীয় বৃদ্ধির হার (Decadal Growth Rate): ১৭.৬৪%।

২. ভারতের জনঘনত্ব (Population Density of India)

কোনো দেশের প্রতি বর্গকিমিতে গড়ে যতজন মানুষ বসবাস করে, তাকে জনঘনত্ব বলে।

• ভারতের গড় জনঘনত্ব: ৩৮২ জন প্রতি বর্গকিমি।
• সর্বাধিক জনঘনত্বপূর্ণ রাজ্য: বিহার (১১০২ জন/বর্গকিমি)।
• সর্বনিম্ন জনঘনত্বপূর্ণ রাজ্য: অরুণাচল প্রদেশ (১৭ জন/বর্গকিমি)।
• সর্বাধিক জনঘনত্বপূর্ণ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল: দিল্লি (১১,২৯৭ জন/বর্গকিমি)।
• সর্বনিম্ন জনঘনত্বপূর্ণ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল: আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।

Competitive Exam Note: পশ্চিমবঙ্গের জনঘনত্ব ১০২৯ জন/বর্গকিমি, যা ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

---

৩. স্বাক্ষরতার হার (Literacy Rate)

জনসংখ্যার গুণগত মান বিচার করার জন্য স্বাক্ষরতার হার খুব জরুরি।

• ভারতের গড় স্বাক্ষরতার হার: ৭৪.০৪%।
• পুরুষ স্বাক্ষরতা: ৮২.১৪%।
• মহিলা স্বাক্ষরতা: ৬৫.৪৬%।
• সর্বাধিক স্বাক্ষর রাজ্য: কেরালা (৯৩.৯১%)।
• সর্বনিম্ন স্বাক্ষর রাজ্য: বিহার (৬৩.৮২%)।
• সর্বাধিক স্বাক্ষর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল: লাক্ষাদ্বীপ।

৪. লিঙ্গ অনুপাত (Sex Ratio)

প্রতি ১০০০ জন পুরুষের অনুপাতে নারীর সংখ্যাকে লিঙ্গ অনুপাত বলা হয়।

• ভারতের গড় লিঙ্গ অনুপাত: ৯৪০ জন নারী (প্রতি ১০০০ জন পুরুষে)।
• সর্বাধিক লিঙ্গ অনুপাতযুক্ত রাজ্য: কেরালা (১০৮৪ জন নারী)।
• সর্বনিম্ন লিঙ্গ অনুপাতযুক্ত রাজ্য: হরিয়ানা (৮৭৭ জন নারী)।
• কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (সর্বাধিক): পুদুচেরি।
• কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (সর্বনিম্ন): দমন ও দিউ।

৫. ভারতের জনসংখ্যার অসম বন্টনের কারণ (দশম শ্রেণির জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ)

ভারতের সব জায়গায় জনসংখ্যা সমান নয়। কোথাও জনবিস্ফোরণ, আবার কোথাও জনবিরল। এর প্রধান কারণগুলি হলো:

ক) প্রাকৃতিক কারণ:

1. ভূপ্রকৃতি: হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল বা দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চলের তুলনায় উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলে কৃষি ও যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এখানে জনবসতি ঘন।
2. নদ-নদী ও জলবায়ু: গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় জলের প্রাচুর্য এবং মনোরম জলবায়ু মানুষের বসবাসের জন্য অনুকূল। অপরদিকে রাজস্থানের মরু অঞ্চলে জলকষ্টের কারণে জনসংখ্যা কম।

খ) অর্থনৈতিক কারণ:

1. কৃষি ও শিল্প: পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশে উন্নত কৃষিব্যবস্থা এবং মহারাষ্ট্র, গুজরাটে শিল্পের উন্নতির কারণে জনসংখ্যা বেশি।
2. পরিবহন ও যোগাযোগ: সমভূমি অঞ্চলে রেল ও সড়ক পথের জালের মতো বিস্তার জনঘনত্ব বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে।

৬. এক নজরে ভারতের জনসংখ্যা (Quick Revision Table for Competitive Exams)

বিষয়	তথ্য (২০১১ জনগণনা অনুযায়ী)
সর্বাধিক জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাজ্য	উত্তরপ্রদেশ
সর্বনিম্ন জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাজ্য	সিকিম
সর্বাধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি (রাজ্য)	মেঘালয়
ঋণাত্মক জনসংখ্যা বৃদ্ধি (রাজ্য)	নাগাল্যান্ড
সর্বাধিক নগরায়ন (Urbanized State)	গোয়া
সর্বনিম্ন নগরায়ন	হিমাচল প্রদেশ

🎓ক্যুইজ পর্ব: ভারতের জনসংখ্যা ও জনগণনা ২০১১ (25 MCQ)

উপসংহার

ভারতের বিপুল জনসংখ্যা একদিকে যেমন দেশের সম্পদ (মানবসম্পদ), অন্যদিকে অতিরিক্ত জনসংখ্যা দেশের উন্নয়নের পথে বাধাও সৃষ্টি করে। তাই সঠিক পরিকল্পনা ও স্বাক্ষরতার প্রসার ঘটিয়ে এই জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করাই এখন প্রধান লক্ষ্য।

• ভারতের ভূ-গঠন (Physiography of India)
• ভারতের জলবায়ু (Climate of India)
• ভারতের মৃত্তিকা (Soils of India)
• ভারতের নদী ব্যবস্থা (Drainage System)
• পশ্চিমবঙ্গের ভূগোল

FAQ Section

​

Please Share