GEOFACTS

আপনি কি জানেন ভারতীয় ভূগোলের পিতা কে??

জ্ঞানচর্চার এক অনন্য শাখারূপে ভূগোল বিষয়টির উদ্ভব ঘটেছে আজ থেকে প্রায় দু হাজার বছরেরও আগে গ্রিকদের (এরাটোসথেনিস; 234 খ্রিস্ট পূর্বাব্দ) দ্বারা। তারপর যথাক্রমে রোমান, আরব, চিন ও ভারতীয় ভৌগোলিকদের অবদান উল্লেখযোগ্য অনস্বীকার্য। যদিও জার্মান ভৌগোলিকদের দ্বারা আধুনিক ভূগোলের সূচনা হয় এবং এই ধারায় পরপর সংযোজিত হয় যথাক্রমে ফরাসি, ব্রিটিশ এবং আমেরিকান ভৌগোলিকদের নাম। পরবর্তীতে বর্ণনামূলক এই শাস্ত্র (1960-এ রাশিমাত্রিক বিপ্লবের পর) ধীরে ধীরে প্রায়োগিক শাস্ত্রে পর্যবসিত হয়েছে। বর্তমানে এই শাস্ত্রের নানান বিভাগ এবং বিভাগগুলির আলোচ্য বিষয় যেমন ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করবে, তার চেয়েও এরা বেশি উৎসাহিত হবে বিষয়টির ভবিষ্যৎ আলোচনার ক্ষেত্র দেখে।

সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হল ‘ভূগোল। ভূগোল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে ‘প্রকৃতি’ ও ‘মানুষ’। ভূগোলবিদ ডিকিনসনের মতে প্রায় ২ হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে জ্ঞানচর্চার বিষয়রূপে ভূগোল শাস্ত্রের উদ্ভব ঘটে। 1818 সালে সর্বপ্রথম কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল চর্চা শুরু হয়। 1927 সালে এশিয়া তথা ভারতে প্রথম আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয় হিসেবে ভূগোল চর্চা শুরু হয়। 1941 সালে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম ড. শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল চর্চা শুরু হয়।

ভারতীয় হিসাবে যাঁর কথা না জানলে আমাদের ভূগোল চর্চা অসম্পূর্ণ থাকবে বলে আমরা মনে করি, তিনি হলেন প্রফেসর শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় (১৯০৩-১৯৮৯) তাঁকে ভারতীয় ভূগোলের জনক বলা হয় ৷ ভূগোল ও ভূতত্ত্ব বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য ৷ 1926 সালে বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি (BHU) থেকে এম.এসসি (M.Sc) করেন ৷

শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়

উচ্চশিক্ষার জন্য ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে যান ৷ প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট উপাধি পান ৷ লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে Ph.D তে ভূষিত করেন ৷ 1928 সাল নাগাদ তিনি রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব ও ভূগোল বিভাগে অধ্যাপনা করেন ৷ এরপর ইংল্যান্ডে যান এবং ফিরে এসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগ চালু করেন ৷ 1956 সালে অবসর নিলেও অবৈতনিক ও উপাধি সহকারে আজীবন বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ দান করে গেছেন ৷


তিনি প্রথম মেঘালয় মালভূমির উপর গবেষণা করেন ৷ এমনকি ‘মেঘালয়’ তারই দেওয়া নাম ৷ 1972 সালে ভারত সরকার মেঘালয়কে একটি রাজ্যের মর্যাদা দেয় ৷ দেশ-বিদেশে তাঁর 150 টি বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা প্রকাশিত হয়৷ ভূমিরূপবিদ্যা, ভূমিসমীক্ষা ,কার্টোগ্রাফি ও আঞ্চলিক ভূগোলে তাঁর অবদান সুবিদিত ৷ 1956 সালে তিনি কলকাতায় National Atlas & Thematic Mapping Organisation (NATMO) প্রতিষ্ঠা করেন৷ তিনি একমাত্র ভারতীয় হিসাবে ‘ইন্টারন্যাশনাল জিওগ্রাফিক্যাল ইউনিয়ন’ এর সভাপতির পদ অলংকৃত করেছিলেন ৷

ভারতে তিনিই প্রায়োগিক ভূগোল (Applied Geography) চালু করেন ৷ তিনি হিন্দি ভাষায় ভারত-রাষ্ট্রীয় অ্যাটলাস তৈরি করেন ৷ ভারতের বিভিন্ন বহুমুখী নদী পরিকল্পনা (Multipurpose River Valley Project) গুলির সাথে তিনি কর্মসূত্রে যুক্ত ছিলেন ৷

sp chaterjee, father of indian geography

ভারত সরকার 1985 সালে তাকে পদ্মভূষণ পুরস্কার সম্মানিত করেন ৷ ভারতের ভূগোল চর্চার বিষয় কথা বললেই ডক্টর শিবপ্রসাদ চ্যাটার্জির কথা আমাদের মনে করতেই হবে৷ ভারতীয় ভূগোলে ডাঃ শিবপ্রসাদ চ্যাটার্জির এক অনন্য অবদান ছিল বলে আজ সমগ্র ভারতবাসী ভূগোল চর্চায় অনেকটা এগিয়ে গেছে। তিনাকে শত কোটি প্রণাম রইলো , ভূগোল চর্চাই তিনার অবদান অনস্বীকার্য ৷

নিয়মিত আপডেট পেতে ও ভূগোল বিষয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। আমাদের এই পোস্টটিতে কোনরকম ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকলে মার্জনা করবেন এছাড়া কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানালে চির কৃতজ্ঞ থাকবো।

ভূগোলের অর্থ (Meaning of Geography):

‘ভূগোল’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল “Geography”; এটি দুটি গ্রিক শব্দ ‘geo’ এবং ‘graphos’-এর মিলনে সৃষ্টি। ‘geo’ শব্দের অর্থ হল ‘ভূমণ্ডল বা পৃথিবী’ এবং ‘graphos’ শব্দের অর্থ হল ‘বর্ণনা বা বিবরণ’। তাই Geography শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল ‘পৃথিবীর বর্ণনা’। প্রাচীন ভারতে বরাহমিহির প্রণীত ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’ গ্রন্থে ‘ভূ গোল’ শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়। প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্য ‘পদ্মপুরাণ’ এ’খগোল’ (khogl-মহাকাশ সম্পর্কিত বিদ্যা) নামক বিষয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। রাজশেখর বসু প্রণীত ‘চলন্তিকা’ অভিধান গ্রন্থে ভূ গোলের আভিধানিক অর্থ হল “পৃথিবী ও বিভিন্ন দেশের বিবরণ” জোন্স: প্রখ্যাত ভৌগোলিক এমরিস্ জোন্স (১৯৮৪ খ্রি.) বলেন, ” ভূগোলের সব ধরনের অনুসন্ধানের কেন্দ্রে আছে স্থান।”

Please Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!