হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলি চিত্রসহ আলোচনা করো ৷
Q1. হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলি চিত্রসহ আলোচনা করো ৷
1.করি বা সার্ক:
হিমবাহ উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে উপত্যকার মধ্য দিয়ে নিচের দিকে প্রবাহের সময় হিমবাহের উৎপাদন ও অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় উপত্যাকার উপরের অংশ খুব খাড়া হয় এবং মাঝখানে গর্ত সৃষ্টি হয় এর আকৃতি কিছুটা হাতলওয়ালা চেয়ার এর মতো হয় এই প্রকার ভূমিরূপ কে স্কটল্যান্ডে করি বলা হয় ৷ উদাহরণ আন্টার্টিকার ওয়ালকট ।
বৈশিষ্ট্য:
i.হাতলওয়ালা ডেক চেয়ারের মতো দেখতে হয়।
ii.দুটি এরিটির মধ্যে অবস্থান করে ।
করি হ্রদ:
হিমবাহ সৃষ্ট করির মধ্যবর্তী খাতটিতে অনেক সময় হিমবাহ গলা জল জমে যে হ্রদের সৃষ্টি হয় তাকে করি হ্রদ বলে ৷

2.এরিটি:
করি বা সার্ক গুলির মস্তক দেশ হওয়ার মাধ্যমে ক্ষয় হয়ে ক্রমশ প্রসারিত হতে থাকে ৷এর ফলে দুটি সার্কের মাঝখানে অবস্থিত উঁচু শিরার মত বা করাতের দাঁতের মতো দেখতে ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় একে এরিটি বলে ৷
বৈশিষ্ট্য:
i.শীর্ষদেশ ধারালো চুরির ফলার মত হয় কখনো কখনো করাতে দাঁতের মতো হয়ে থাকে।
ii.দুটি সার্কের মাঝখানে অবস্থান করে।
iii.শৈলশিরা বা উচ্চভূমির মত দেখতে হয়।
3.পিরামিড চূড়া বা হর্ন:
পাশাপাশি তিনটি চারটি করে গঠিত হলে এদের মাঝখানে রংস খালা ও উঁচু হয়ে একটি চুলার আকার ধারণ করে যাকে পিরামিড চূড়া বলে ৷
সুইজারল্যান্ডের আউট পর্বতের ম্যাটারহর্ন এরূপ একটি পিরামিড চূড়া ম্যাটারহর্ন এর নাম অনুসারে এইরূপ ভূমিরূপের নামকরণ ৷ উদাহরণ বদ্রীনাথের নীলকন্ঠ নেপালের মাকালু ৷
4.হিমদ্রোণী বা হিমখাত:
পার্বত্য অঞ্চলের নদী উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে ইমো বায়ুর ক্ষয় কার্যের ফলে নদী উপত্যকাটি অনেকটা ইংরেজি U অক্ষরের মত দেখতে হয় একে হিমদ্রোণী বলে ৷
5.হিম সিঁড়ি বা হিম সোপান:
হিমবাহের ক্ষয় কার্যের তারতম্যের ফলে অর্থাৎ হিমবাহের অসম ক্ষয়কার্যের ফলে হিমবাহ উপত্যকায় সিঁড়ি বা ধাপের সৃষ্টি হয় একে হিম সিঁড়ি বলে ৷
6.ঝুলন্ত উপত্যকা:
যখন কোন মূল হিমবাহে একাধিক উপ হিমবাহ এসে পড়ে তখন মূল হিমবাহ উপত্যকার গভীরতা উপহিমবাহ অপেক্ষা অনেক বেশি হয় ৷ হিমবাহ অপসারিত হলে উপহিমবাহের উপত্যকা গুলি মূল বা প্রধান হিমবাহ উপত্যকার উপর ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে বলে মনে হয়, একে ঝুলন্ত উপত্যকা বলে ৷ বদ্রীনাথ এর কাছে ঋষি গঙ্গা একটি ঝুলন্ত উপত্যকা ৷

বৈশিষ্ট্য:
i.পার্বত্য অঞ্চলে U আকৃতির উপত্যকা।
ii.ঝুলন্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত হলে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়।
7.রসে মোতানে:
অনেক সময়ই উপত্যাকার মধ্যে উঁচু ঢিবির আকারে অবস্থিত প্রস্তরখন্ডের উপর দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হলে প্রবাহের দিকে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় প্রস্তরখন্ডটি মসৃণ এবং বিপরীত দিকে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অমসৃণ ও ফাটলযুক্ত হয় ৷এরূপ ভূমিরূপকে রসেমতানে বলা হয় ৷কাশ্মীরে ঝিলামের উপনদী লিডার উপত্যাকায় রসেমতানে দেখা যায় ৷

8.ক্র্যাগ ও টেল:
হিমবাহের গতিপথে কঠিন শিলা অবস্থান করলে তার পেছনের ধরমশিলা এর হাত থেকে রক্ষা পায় ফলে কঠিন শিলা উঁচু ঢিবির ন্যায় ও নরম শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত না হয়ে সরু ল্যাজের ন্যায় অবস্থান করে। এরকম কঠিন শিলা কে ক্র্যাগ এবং পেছনের ঢাল যুক্ত কোমল শিলা কে টেল বলে ৷ টেল অংশটি যতই ক্রাগ থেকে দূরে যায় ততই সরু হয়ে পড়ে ৷

9.বার্গস্রুন্ড ও ক্ৰেভাস:
বরফাবৃত খাড়া পর্বত গাত্র ও পার্বত্য হিমবাহের মধ্যে যে সংকীর্ণ ও গভীর ফাটল সৃষ্টি হয়, তাকে বার্গস্রুন্ড বলে ৷আর হিমবাহের উপরিভাগে বরফের মধ্যে গতিপথের সমান্তরাল ও আড়াআড়ি ভাবে একাধিক ছোট ফাটল গুলি কে একত্রে ক্ৰেভাস বলে ৷

10.ফিয়র্ড:
উপকূল সংলগ্ন অঞ্চলে হিমবাহ উপত্যকা ক্রমাগত ক্ষয়কার্যের ফলে গভীর হয়ে সমুদ্রের জলে নিমজ্জিত হলে তাকে ফিয়র্ড বলে ৷ নরওয়ে , সুইডেন , গ্রীনল্যান্ড উপকূলে দেখা যায় ৷ নরওয়ের সজনে পৃথিবীর গভীরতম ফিয়র্ড |
Q2. নদী উপত্যকা (River valley) ও হিমবাহ উপত্যকা (Glacier valley) এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
বিষয় | নদী উপত্যকা / ‘V’ আকৃতি উপত্যকা | হিমবাহ উপত্যকা / ‘U’ আকৃতি উপত্যকা |
অবস্থান | শুষ্ক মরু অঞ্চল ও চির তুষারাবৃত অঞ্চল ছাড়া সর্বত্রই নদীর কাজ দেখা যায় বলে সর্বত্রই নদী উপত্যকা দেখা যায়। | শুধুমাত্র উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে, চির তুষারাবৃত অঞ্চলে হিমবাহ উপত্যকা দেখা যায় কারণ এখানে হিমবাহের কাজ সর্বাধিক। |
বাঁকের অবস্থান | নদী তার গতিপথে বাধা পেলে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ, নদী উপত্যকায় বাঁক দেখা যায়। | হিমবাহ তার গতিপথে কোনো বাধা থাকলে তা সরিয়ে প্রবাহিত হয় বলে হিমবাহ উপত্যকায় বাঁক দেখা যায় না। |
আকৃতি | নদী উপত্যকা ‘V’ ও ‘I’ আকৃতি হয়ে থাকে। | হিমবাহ উপত্যকা ‘U’ আকৃতি হয়ে থাকে। |
ক্ষয় কাজ | প্বার্শ ক্ষয় কম ও নিম্ন ক্ষয় বেশি ঘটে। | প্বার্শ ক্ষয় ও নিম্ন ক্ষয় উভয় সমান। |
জনবসতি | নদী উপত্যকাকে কেন্দ্র করে জনবসতি, শিল্প, পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। | হিমবাহ উপত্যকায় মানব উন্নয়নমূলক ব্যবস্থাসমূহ গড়ে ওঠা সম্ভব নয়। |
দৈর্ঘ্য | সাধারণত নদী উপত্যকার দৈর্ঘ্য বেশি হয়। | হিমবাহ উপত্যকার দৈর্ঘ্য কম হয়। |
প্রকৃতি | নদী উপত্যকা এবড়োখেবড়ো অমসৃণ প্রকৃতির হয়। | হিমবাহ উপত্যকা মসৃণ প্রকৃতির হয়। |
Q3. বার্গস্রুন্ড ও ক্রেভাসের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
বিষয় | বার্গস্রুন্ড | ক্রেভাস |
অবস্থান | হিমবাহ ও পর্বতের মধ্যে সৃষ্ট ফাটল। | হিমবাহের পৃষ্ঠদেশে সৃষ্ট ফাটল। |
গভীরতা | বার্গস্রুন্ড গভীরতায় বেশি। | ক্রেভাসের গভীরতা কম। |
ফাটলের ধরন | এটি উলম্ব ফাটল। | আড়াআড়ি ফাটল। |
বিপদ প্রবণতা | পর্বতারোহীদের জন্য বিপদজ্জনক। | পর্বতারোহীদের জন্য কম বিপদজ্জনক। |
Q4. ঝুলন্ত উপত্যকায় জলপ্রপাত গঠিত হয় কেন?
উত্তর: পার্বত্য অঞ্চলে গভীর মূল হিমবাহ উপত্যকার সঙ্গে ক্ষুদ্র উপহিমবাহ উপত্যকার সংযোগস্থলে ঢালের প্রবল পার্থক্যের ফলে পরবর্তীকালে হিমবাহ অপসারিত হলে সৃষ্ট নদী প্রবাহ উঁচু উপউপত্যকা থেকে নীচে মূল উপত্যকায় প্রবলবেগে পতিত হয়ে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়।
Q5. হিমসিঁড়ি (Glacial Step) কাকে বলে?
উত্তর: হিমদ্রোণীতে হিমবাহের বৈষম্যমূলক ক্ষয়কাজের ফলে উপত্যকার ঢাল সিঁড়ির ধাপের মতো নিম্নদিকে হয়। একে হিমসোপান বলে। এর তিনটি অংশ থাকে (i) রাইজার-ঢালেরনিম্নমুখী ঢালু খাড়া তল। (ii) রিগেল-রাইজারের পেছনে শীর্ষ দেশের শিলাস্তূপ। (iii) ট্রেড-সমতল ও উর্ধ্বমুখী ঢালু অংশ।
Q5.প্যাটার্নস্টার হ্রদ (Paternoster Lake) কাকে বলে?
উত্তর: উপত্যকা হিমবাহে বৈষম্যমূলক ক্ষয়কাজের ফলে পার্বত্য ঢালে সিঁড়ির মতো ধাপ সৃষ্টি হয়। এই হিমবাহের ঢাল পর্বতের পাদদেশের দিকে নিম্নমুখী না হয়ে পর্বত চূড়ার দিকে ঊর্ধ্বমুখী হলে বরফগলা জল জমে ধাপে ধাপে যে সারিবদ্ধ হৈমবাহিক হ্রদ সৃষ্টি হয় তাকে প্যাটার্নস্টার হ্রদ বলে। যথা হিমালয়ে রূপকুণ্ড, হেমকুণ্ড প্রভৃতি।
Q6.হর্ন (Horn) কী?
উত্তর: কোনো পর্বতশৃঙ্গের চারিদিকে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে তিনটি বা তার বেশি সার্ক ও এরিটি সৃষ্টি হলে ওই শৃঙ্গটিকে পিরামিডের মতো দেখায়, একে পিরামিড চূড়া বলে। সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতের ‘ম্যাটারহর্ন’ এরূপ একটি পিরামিড চূড়া। এই ম্যাটারহর্নের নামানুসারে পিরামিড চূড়াকে হর্ন বলা হয়।
Q7.ফিয়ার্ড (Fiard) কাকে বলে?
উত্তর: হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ফিয়র্ড উপত্যকাগুলি যখন কম দৈর্ঘ্যের ও কম গভীরতা বিশিষ্ট হয়, তখন তাকে ফিয়ার্ড বলা হয়। অর্থাৎ, অপেক্ষাকৃত ছোটো ফিয়র্ড গুলিই ফিয়ার্ড নামে পরিচিত। উদাহরণ : সুইডেন উপকূলে বহু ফিয়ার্ড দেখা যায়।
5 Marks Questions Answer
1.হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলি চিত্রসহ আলোচনা করো ৷👉 Click Here
2.হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ গুলি আলোচনা করো I👉 Click Here
3.হিমবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ গুলি আলোচনা করো I👉 Click Here
এরকম মাধ্যমিক ভূগোলের অধ্যায় ভিত্তিক প্রশ্ন উত্তরের জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি Webbhugol.com ফলো করুন। Thank you for Visit.
Please Share