MP GEOGRAPHY

নদীর সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ চিত্রসহ আলোচনা কর।

1.পলল শঙ্কু ও পলল ব্যজনী:
নদীর মধ্যগতি তে হঠাৎ ঢাল কমে গেলে পর্বতের পাদদেশে নদীবাহিত নুরি বালি জমা হয়ে শঙ্কু আকার ধারণ করলে তাকে বলা হয়
নদীবাহিত বিভিন্ন পদার্থ সঞ্চিত হয়ে মৃদু ঢাল যুক্ত পাখার মত দেখতে সমভূমিকে পলল ব্যজনী বলে I
একাধিক পলল শঙ্কু যখন পাশাপাশি অবস্থান করেও পলল ব্যজনী গঠিত হয়। হিমালয় , আন্দিজ ,রকি ইত্যাদি পর্বতের পাদদেশে নদীতে দেখা যায় I

পলল ব্যজনী

বৈশিষ্ট্য:
i.পর্বতের পাদদেশে সৃষ্টি হয়।
ii.পলল শঙ্কু ত্রিকোণাকার ও পলল ব্যজনী পাখার মতো দেখতে হয়।
iii.হঠাৎ ঢাল কমে যাওয়ার ফলে এ ধরণের সঞ্চয় হয়।

2.প্লাবনভূমি:
নিম্নগতিতে নদীর স্রোতের বেগ একেবারেই থাকে না বলে নদীবাহিত নুড়ি বালি পলি প্রকৃতির সঞ্চিত হয়ে নদী অগভীর হয়ে পড়ে এর ফলে বর্ষাকালে অতিরিক্ত জল এসে পড়লে নদীর দুকুল ছাপিয়ে বন্যার সৃষ্টি হয় ৷ বন্যা বা প্লাবনের
ফলে নদীর দু-ধারের বিস্তীর্ণ ভূমিতে পালি, বালি, কাদা প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে প্লাবনভূমি সৃষ্টি হয় ৷

বৈশিষ্ট্য:
i.নদীতে প্লাবন বা বন্যার ফলে সৃষ্টি হয়।
ii.প্লাবন ভূমির পলি মাটি উর্বর যা কৃষিকাজের ক্ষেত্রে উপযুক্ত।

প্লাবনভূমি
স্বাভাবিক বাঁধ প্লাবনভূমি

4.স্বাভাবিক বাঁধ:
প্লাবনভূমি সৃষ্টির সময় অনেক ক্ষেত্রে নদীর দুই পাড় বরাবর পলি, বালি,কাদা প্রকৃতি সঞ্চিত হয়ে উঁচু বাঁধে সৃষ্টি করে ৷ এরূপ বাঁধকে স্বাভাবিক বাঁধ বা লিভি বলে। বন্যার সময় অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে ভেঙে যায় এটি প্লাবন ফাটল বলে। এক কথায় ,বন্যার জল কমে গেলে জলের সঙ্গে বাহিত নুড়ি পলি কাদা প্রভৃতি নদীতীর বরাবর সঞ্চিত হয়ে উঁচু বাঁধের সৃষ্টি হয় যাকে স্বাভাবিক বাঁধ বলে

5.অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ:
নদীর মধ্যেও নিম্ন গতিতে মূল নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অবস্থিত ঘোড়ার খুরের ন্যায় দেখতে হ্রদকে বলা হয় অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ I
উৎপত্তি: নদীর আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত হওয়ার সময় এক পাড়ে ক্ষয় ও অন্য পাড়ে সঞ্চয় হওয়ায় , ক্ষয়কার্য ও সঞ্চয়কার্যের ফলে দুটি বাঁক খুব কাছাকাছি চলে আসে এবং একসময় বাঁক দুটি মিলে যায় বাঁকের একটি অংশ তখন মূলনদী থেকে আলাদা হয়ে ঘোড়ার ক্ষুরের মত অবস্থান করে একে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে ৷ যেমন-মুর্শিদাবাদের মতিঝিল

অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ
অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ

বৈশিষ্ট্য:
i.নদীর ক্ষয় ও সঞ্চয় কার্যের মিলিত ভূমিরূপ।
ii.মূল নদী থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে গড়ে ওঠে।

6.বদ্বীপ:
নদী মোহনার কাছে জল স্রোতের বেগ না থাকার কারণে নদী তার সকল প্রকার বহন করা পদার্থসমূহ সঞ্চয় করে বাংলার মাত্রাহীন অক্ষর ব কিংবা গ্রিক অক্ষর ডেল্টার মত ভূমি গঠন করলে তাকে বদ্বীপ বলে ৷আকৃতি অনুযায়ী বদ্বীপ বিভিন্ন প্রকারের হয় যেমন ধনুকাকৃতি, পাখির পায়ের মতো, কাসপেট বদ্বীপ ইত্যাদি

7.খাঁড়ি:
নদীর মোহনা খুব প্রশস্ত বা ফানেল আকৃতির হলে তাকে খাঁড়ি বলে ৷ সুন্দরবনে খাঁড়ি দেখা যায় ৷

8.নদী দ্বীপ বা নদী চর:
নদী দ্বারা বাহিত পলি বালি প্রভৃতি নদীর নিম্ন প্রবাহ অনেক সময় নদীর মাঝে সঞ্চিত হয়ে যে চড়া সৃষ্টি করে তাকে নদী চর বা নদী দ্বীপ বলে ব্রহ্মপুত্র নদের মাজুলী দ্বীপ ভারত তথা পৃথিবীর বৃহত্তম নদী দ্বীপ

বিষয়পলল শঙ্কু (Alluvial Cone) পলল ব্যজনী (Alluvial Fan)
সংজ্ঞাপর্বতের পাদদেশে নদীবাহিত পলি, বালি, নুড়ি, কাঁকর সঞ্চিত হয়ে গড়ে ওঠা শঙ্কু আকৃতির ভূমিরূপকে পলল শঙ্কু বলে।পলল শঙ্কুর ওপর দিয়ে নদী বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত হলে পলল। শঙ্কু অর্ধগোলাকৃতিতে ভাগ হয়ে যে হাতপাখা আকৃতির ভূমিরূপ গড়ে তোলে, তাকে পলল ব্যজনী বলে।
উচ্চতাপলল শঙ্কুর উচ্চতা তুলনামূলক বেশি।পলল ব্যজনীর উচ্চতা অপেক্ষাকৃত কম।
ঢালপলল শঙ্কুর ঢাল তীব্র বা খাড়া প্রকৃতির হয়। (1°-15°)পলল পাখার ঢাল মৃদু প্রকৃতির হয়। (1° -5°)
বিস্তারপলল শঙ্কুর পাদদেশীয় ভূমিভাগের বিস্তার কম।পলল পাখার পাদদেশীয় ভূমিভাগের বিস্তার বেশি।
পদার্থঅপেক্ষাকৃত বড়ো দানার পলি, বালি, নুড়ি ও কাঁকর দ্বারা গঠিত হয়।সূক্ষ্ম পলি ও বালি দ্বারা গঠিত হয়।

অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ: নিম্নপ্রবাহে আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত নদী বাঁকের বাইরের পাড়টি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ও বাঁকের অভ্যন্তরীণ পাড়টিতে পলি সঞ্চিত হয়।এর ফলে নদীর বাঁক আরও বাড়তে থাকে এবং এক সময় দুটি বাঁক পৃথককারী বাঁকের গ্রিবা অংশটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ঘোড়ার ক্ষুরের মতো একটি অংশ নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ও মূল নদীটি সোজাপথে প্রবাহিত হয়। এই প্রকার ঘোড়ার ক্ষুরের মতো বিচ্ছিন্ন অবরুদ্ধ হ্রদকে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে। এই ভূমিরূপটি মূলত নদীর ক্ষয়, বহন ও অবক্ষেপণের মিলিত কাজের ফলে সৃষ্টি হয়। উদাহরণ: গঙ্গা নদীর নিম্ন প্রবাহে দেখা যায়।

উত্তর: সংজ্ঞা: সমভূমি প্রবাহে নদীবাহিত পলি, বালি, নুড়ি-কাঁকর নদী উপত্যকার দুধারে যে সিঁড়ির মতো ধাপের সৃষ্টি করে তাকে নদীমঞ্চ বলে।

উৎপত্তি: সাধারণত দুটি কারণে নদীমঞ্চ গড়ে ওঠে। যথা- নদীর ক্ষয় ও বহনক্ষমতা হ্রাস পেলে নদীবাহিত পদার্থের সঞ্চয়ের ফলে নদীমঞ্চ গড়ে ওঠে। নদী পুনর্যৌবন লাভ করলে নদীর নতুন উপত্যকার পাশে পুরানো উপত্যকাটি নদীমঞ্চরূপে অবস্থান করে। উদাহরণ: গঙ্গা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি নদীর গতিপথে নদীমঞ্চ দেখা যায়।

উত্তর: (i) বিভিন্ন উপনদী বাহিত প্রধান নদীতে মোহনার নিকট জলপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়।
(ii) ভূমিঢাল অতিমৃদু হওয়ায় জলপ্রবাহের গতিবেগ খুবই কম হয়।
(iii) উচ্চ ও মধ্যগতি থেকে আগত বোঝা নদীগর্ভে সঞ্চিত হয়ে নদী অগভীর হয়।
(iv) বর্ষায় অতিবৃষ্টির ফলে হঠাৎ জলের জোগান বৃদ্ধি পেয়ে তা বহনক্ষমতা অতিক্রম করলে দুকূল ছাপিয়ে বন্যা সৃষ্টি করে।

ধনুকাকৃতি বদ্বীপ: প্রধান নদী ও শাখানদীর মিলনস্থলে শাখানদীবাহিত পলিসমূহ সঞ্চিত হয়ে ধনুকাকৃতি বদ্বীপ গঠন করে। এই বদ্বীপের সমুদ্রের সম্মুখবর্তী অংশ ধনুকের মতো বেঁকে থাকে। এই বদ্বীপ জিহ্বাগ্র বদ্বীপ বা ব্যজনী বদ্বীপ নামেও পরিচিত। উদাহরণঃ গঙ্গা নদী, হোয়াংহো নদী, নীলনদের বদ্বীপ ধনুকাকৃতি বদ্বীপের উদাহরণ।

পাখির পায়ের মতো বদ্বীপঃ মূল নদী বহু শাখায় বিভক্ত হয় এবং সমুদ্রে পড়ার পরে জলের প্রবাহ বজায় থাকলে এই ধরনের বদ্বীপ সৃষ্টি হয়। পাখির পায়ের মতো দেখতে বলে পক্ষীপাদ বদ্বীপ (finger delta) বলে।
সৃষ্টির কারণ: 1) মূল নদী বহু শাখায় বিভক্ত। 2) নদী সমুদ্রে বহুদূর পর্যন্ত বাহিত হয়ে এই বদ্বীপ সৃষ্টি করে। উদাহরন-মিসিসিপি নদীর বদ্বীপ পাখির পায়ের মতো (মেক্সিকো উপসাগর)। ভারতের কাবেরী নদীর বদ্বীপ পাখির পায়ের মতো। মিসিসিপি বদ্বীপের শাখা নদী গুলির মোহনাগুলিকে Pass বলা হয়।

মাধ্যমিকের ভূগোল বিষয়ের অধ্যায় ভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট Webbhugol.com টি ফলো করুন। কোন উত্তরে ভুল ভ্রান্তি থাকলে তা কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। Thank You for Visit.

Please Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!