Class 10 চিত্রসহ নদীর ক্ষয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ
নদীর ক্ষয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ বৈশিষ্ট্যসহ আলোচনা কর|Class 10
1.V আকৃতির উপত্যকা (গিরিখাত) : নদীর পার্বত্য প্রবাহে ভূমির ঢাল বেশি থাকায় আর্দ্র ও আর্দ্র প্রায় অঞ্চলে নদীর প্রবল গতিতে নিচের দিকে নামতে থাকে ফলে প্রবল নিম্নক্ষয় করে এবং বৃষ্টিপাতের প্রভাবে স্বল্প পরিমাণে পার্শ্ব ক্ষয় করে হলে পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্ন ক্ষয় বেশি হওয়ায়ইংরেজি v অক্ষরের মতো নদী উপত্যকা সৃষ্টি করে I

বৈশিষ্ট্য:
i.গিরিখাত গভীর ও সংকীর্ণ হয়।
ii.গিরিখাতের দু’পাশের দেওয়াল অত্যন্ত খাড়া প্রকৃতির হয়ে থাকে।
iii,আদ্র পার্বত্য অঞ্চলে লক্ষ্য করা যায়।
2. I আকৃতির উপত্যকা বা ক্যানিয়ন:
বৃষ্টিহীন পার্বত্য অঞ্চলে কিংবা শুষ্ক অঞ্চলে নরম শিলাস্তরের উপর দিয়ে নদী প্রবাহিত হলে নদীর নিম্ন ক্ষয় বেশি মাত্রায় হয় ফলে নদী উপত্যকা ইংরেজি I অক্ষরের মতো হয় এই I আকৃতির উপত্যকা বেশি গভীর হলে তাকে ক্যানিয়ন বলে I
পৃথিবীর বৃহত্তম ক্যানিয়ন- কলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন I পৃথিবীর গভীরতম ক্যানিয়ন- পেরুর কলকা নদীর এল ক্যানন দ্য কলকা
বৈশিষ্ট্য:
i.শুষ্ক মরু জলীয় অঞ্চলের লক্ষ্য করা যায়।
ii,জলপ্রবাহের পরিমাণ কম থাকলে ক্যানিয়ন ভালো হয়।
iii. I আকৃতির গভীর উপত্যকা সৃষ্টি হয়।
3.মন্থকূপ:
পার্বত্য প্রবাহে নদীর বাহিত প্রস্তর খন্ড গুলির অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় নদীর তলদেশে কোমল শিলা আঘাত করে ছোট ছোট গর্ত সৃষ্টি করে যাদের মন্থকূপ বলে ৷অসংখ্য মন্থকূপ একসঙ্গে অবস্থান করলে তাকে মন্থকূপ কলোনি বলে ৷
তিস্তা নদী ও সুবর্ণরেখা নদীতে মন্থকূপ দেখা যায় I

বৈশিষ্ট্য:
i.আবঘর্ষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠে।
ii.নদীগর্ভে গোলাকার ও মসৃণ গর্তগুলি সৃষ্টি হয় সৃষ্টি হয়।
4.জলপ্রপাত:
নদীর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলা স্তর অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে নরম শিলা কঠিন শিলা অপেক্ষা দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ও কঠিন শিলা অপেক্ষাকৃত কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে খাড়া ঢাল সৃষ্টি করে এই ঢাল বরাবর নদীর জল সরাসরি উপর থেকে নিচে পড়লে তাকে জলপ্রপাত বলেI যেমন-নায়াগ্রা
বৈশিষ্ট্য:
i.জলপ্রপাত ক্রমশ তার দিকে পশ্চাদপসরণ করে থাকে।
ii.পাশাপাশি অবস্থিত অনেকগুলি জলপ্রপাতকে একসঙ্গে প্রপাত রেখা বলে।
5.প্রপাত কূপ:
জলপ্রপাতের পাদদেশে সৃষ্ট জলের ঘূর্ণির মধ্যস্থ নুড়ি বা সি শিলাখন্ড পাক খেতে খেতে ঘর্ষণের ফলে নিচের শিলায় যে গর্তের সৃষ্টি করে তাকে প্রপাতকূপ বলে I যেমন- এঞ্জেল জলপ্রপাতের পাদদেশের প্রপাত কূপ দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য:
i.জলপ্রপাতের নিচে প্রপাত সৃষ্টি হয়।
ii.প্রপাত কূপের গভীরতা জলপ্রপাতে জলের পরিমাণের উপর নির্ভরশীল I
6.খরস্রোত:
নদীর পার্বত্য প্রবাহে প্রচন্ড ঢাল সম্পন্ন জলপ্রপাতে যখন বিপুল পরিমাণ জল প্রবাহিত হয় তখন তাকে খরস্রোত বলে আফ্রিকার জাইরে নদীতে 32 টি খরস্রোত রয়েছে I

7. শৃঙ্খলিত শৈলশিরা:
কঠিন শিলা কে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য পার্বত্য প্রবাহে নদীর ছোট ছোট বাইক নিয়ে প্রবাহিত হয় এর ফলে পরপর দুটি বাকের সমস্ত পাপগুলি কে একসঙ্গে দেখা যায় না এই প্রকার ভূমিরূপ কে শৃঙ্খলিত শৈলশিরা বলে

Q.2. ‘ উৎসের দিকে জলপ্রপাত ক্রমশ সরে যায়।’ ব্যাখ্যা করো।
অথবা, জলপ্রপাতের পশ্চাদপসরণ হয় কেন?
উত্তর: পার্বত্য অংশে নদী উপত্যকায় ঢালের পার্থক্য ঘটলে নদীর জল খাড়া ঢাল বরাবর প্রবলবেগে নীচে পতিত হয়, একে জলপ্রপাত বলে। পৃথিবীর কোনো কোনো জলপ্রপাত বহুক্ষেত্রে সময়ের সাপেক্ষে পিছনের দিকে অর্থাৎ নদীর উৎসের দিকে পশ্চাদপসরণ করে। এর প্রধান কারণগুলি হল-
i.কঠিন ও কোমল শিলার অনুভূমিক অবস্থান: নদীর গতিপথে কঠিন শিলা ও কোমল শিলা পরপর ওপর নীচে অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে নিম্নে অবস্থিত কোমল শিলাস্তর দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে খাড়া ঢালের সৃষ্টি হয় এবং জলপ্রপাত গড়ে ওঠে। জলপ্রপাতের জল নীচের কোমল শিলাস্তরকে সহজেই ক্ষয় করতে থাকে। ফলে, ওপরের কঠিন শিলাস্তরের নীচের অংশ ক্রমশ ফাঁকা হতে থাকে। একসময় অবলম্বন হারিয়ে কঠিন শিলাস্তরের কিছু অংশ ভেঙে পড়ে। ফলস্বরূপ, জলপ্রপাত পশ্চাদপসরণ করে বা উৎসের দিকে সরে যায়।
ii.নদীর মস্তকমুখী বা উৎসমুখী ক্ষয়: নদী তার গতিপথের ভূমির ঢাল পর্যায়িত করার জন্য ‘নদীর মস্তক’ বা উৎসের দিকে ক্ষয় করতে থাকে। নদী যতই উৎসের দিকে ক্ষয় করে ততই জলপ্রপাত পশ্চাৎ অংশে অপসারিত হয়। নিবিন্দুতে সৃষ্ট জলপ্রপাতগুলি এভাবে পিছনের দিকে সরতে থাকে।
iii.প্রপাতকূপের আয়তন বৃদ্ধি: জলপ্রপাতের নিচে সৃষ্টি হওয়া প্রপাতকূপগুলি ধীরে ধীরে আয়তনে বড় হয়ে বিশালাকার ধারণ করলেওপরের অংশ ঝুলতে থাকে এবং একসময় তা ভেঙে পড়ে। ফলে জলপ্রপাত উৎসের দিকে সরে যায়। উদাহরণ: সেন্ট লরেন্স নদীর নায়াগ্রা জলপ্রপাত (আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ), ভারতের ইন্দ্রাবতী নদীর চিত্রকূট জলপ্রপাত এমনভাবেই ক্রমশ পশ্চাদপসরণ করছে।
জলপ্রপাত সৃষ্টির কারণঃ
i.কঠিন ও কোমল শিলার অবস্থান: পাশাপাশি অবস্থিত কঠিন ও কোমল শিলা উপর দিয়ে নদী প্রবাহিত হলে কোমল শিলা ক্ষয় হয়ে খাড়া ঢাল সৃষ্টি করে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়।
ii চুতি বা ফাটল সৃষ্টি: নদীর গতিপথে ফাটল উৎপন্ন হলে খাড়া ঢাল সৃষ্টি হয়ে জলপ্রপাত গড়ে ওঠে।
iii.ঝুলন্ত উপত্যকায় জলপ্রপাত: হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট U আকৃতির ভাসমান উপত্যাকার মধ্যে নদী প্রবাহিত হলে, জল পর্বতের উপর থেকে নিচে পতিত হয়ে জলপ্রপাত গড়ে ওঠে।
iv.মালভূমির প্রান্তভাগ: মালভূমির প্রান্তভাগে নদী খাড়াভাবে নেমে এসে জলপ্রপাত তৈরি করে।
v.নিক বিন্দু: পুনর্যৌবন এর ফলে সৃষ্ট নিক বিন্দুতে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়।
জলপ্রপাতের শ্রেণিবিভাগ
1) র্যাপিড: জল যখন উঁচু জায়গা থেকে ধাপে ধাপে নামে তাকে র্যাপিড বলে। যেমন-সুবর্ণরেখার হুডু জলপ্রপাত।
2) ক্যাসকেড: অনেক সময় নদী ক্ষুদ্র জলপ্রপাতসৃষ্টি করে প্রবাহিত হয় একে ক্যাসকেড বলে। যেমন-সুবর্ণরেখা নদীর জোনহা জলপ্রপাত।
৪) ক্যাটারাক্ট: অধিক উচ্চতা থেকে প্রবল জলধারা যখন উত্তাল গতিতে নেমে আসে তাকে ক্যাটারাক্ট বলে। যেমন- সাল্টো এঞ্জেল।
Q3. পার্থক্য লেখ:- প্রপাতকূপ ও মন্থকূপ এর মধ্যে ।
বিষয় | (Plunge Pool) প্রপাতকূপ | (Pot Holes) মন্থকূপ |
সংজ্ঞা | নদীর জলপ্রপাতের নীচে পার্বত্য প্রবাহে জলরাশির পতনের জন্য যে গর্তের সৃষ্টি হয়, তাকে প্রপাতকূপ বলে। | নদীর জলের সঙ্গে বাহিত প্রস্তরখণ্ড, নুড়ি, বালি প্রভৃতি পার্বত্য প্রবাহে ঘুরতে ঘুরতে অগ্রসর হয় এবং অবঘর্ষ পদ্ধতিতে নদীর তলদেশে ছোটো ছোটো গর্তের সৃষ্টি করে, এই গর্তকে মন্ত্রকূপ বলে। |
সৃষ্টির শর্ত | প্রপাতকূপের সৃষ্টি নির্ভর করে জলপ্রপাতের উচ্চতা ও প্রস্তরখণ্ডের পরিমাণের ওপর। | মন্থকূপের সৃষ্টি নির্ভর করে নদীর সঙ্গে বাহিত নুড়ি, পাথরের প্রকৃতি ও নদীর গতির ওপর। |
গভীরতা | মন্থকূপের তুলনায় প্রপাতকূপের গভীরতা বেশি হয়। | মন্থকূপের গভীরতা কম হয়। |
আয়তন | প্রপাতকূপ মন্থকূপের তুলনায় বড়ো হয়। | মন্থকূপ আয়তনে ছোটো হয়। |
উদাহরণ | প্রায় প্রতিটি জলপ্রপাতের পাদদেশে প্রপাতকূপ দেখা যায়। | হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলিতে মন্থকূপ দেখা যায়। |
Q4. গিরিখাত (Gorge) ও ক্যানিয়ন (Canyon)-এর মধ্যে পার্থক্য লেখ।
অথবা, ‘I’ ও ‘V’ আকৃতির নদী উপত্যকার মধ্যে তুলনা করো।
বিষয় | গিরিখাত (Gorge) / ‘V’ আকৃতির নদী উপত্যকা | ক্যানিয়ন (Canyon)/ ‘I’ আকৃতির নদী উপত্যকা |
উৎপত্তি | নদীর উচ্চগতিতে বৃষ্টিবহুল পার্বত্য অঞ্চলে গিরিখাত সৃষ্টি হয়। | বৃষ্টিহীন শুষ্ক বা মরুপ্রায় অঞ্চলে ক্যানিয়ন সৃষ্টি হয়। |
আকৃতি | গিরিখাত ‘V’ আকৃতির খুব গভীর ও সংকীর্ণ। | ক্যানিয়ন ‘।’ আকৃতির অত্যন্ত গভীর ও খুব সংকীর্ণ হয়। |
ক্ষয়কাজ | নদীতে পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় বেশি হয়। | বৃষ্টিপাতের অভাবে নিম্নক্ষয় খুব বেশি হয়, পার্শ্বক্ষয় প্রায় হয় না। |
ভূমির ঢাল | পার্শ্বদেশের ঢাল কম খাড়া হয়। | পার্শ্বদেশের ঢাল খুব খাড়া হয়। |
নদীখাত | নদীখাত অপেক্ষাকৃত কম সংকীর্ণ হয়। | নদীখাত সুগভীর ও খুবই সংকীর্ণ হয়। |
উপনদীর সংখ্যা | গিরিখাতে দুপাশ থেকে কিছু উপনদী এসে মেশে। | যেহেতু এটি শুষ্ক অঞ্চলে দেখা যায়, তাই কোনো উপনদী এসে মেশে না। |
উদাহরণ | চিনের ইয়াংসি কিয়াং নদীর ইচাং গিরিখাত। | কলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। |