GEOFACTS

আপনি কি জানেন দক্ষিণবঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের আধিক্য দেখা যায় কেন?

পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাংশে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন জেলাগুলিতে বছরে গড়ে ৬টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। এর কারণ- বর্ষাকালে আন্দামান ও নিকোবর অঞ্চল থেকে শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণাবাত তথা সাইক্লোন সৃষ্টি হয়ে বঙ্গোপসাগরীয় উপকূলে আছড়ে পড়ে। আবার শরৎকালে প্রত্যাবর্তনকারী শুষ্ক মৌসুমীবায়ুর সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরের আর্দ্র সামুদ্রিক বায়ুর সংঘর্ষের ফলে আশ্বিনের ঝড় সৃষ্টি হয়।

দক্ষিণবঙ্গের ঘূর্ণিঝড় বলতেই আমাদের ‘আয়লা’ ঝড়ের কথা মনে পড়ে।

আয়লা কী?

আয়লা এক প্রকার ঘূর্ণিঝড় , ভারতের (পূর্ব) বিখ্যাত রাজার নাম অনুসারে ঐ নামকরণ হয়। আবার অনেকের মত,তিব্বতে ঐ কথার অর্থ ওক বৃক্ষ। আয়লা নামটি মালদ্বীপের দেওয়া।।  এই শব্দটি মালদ্বীপে বেশি পরিমানে ব্যবহার করা হয়। ২৫ শে মে ঐ ঝড় প্রথম আঘাত হানে দঃ ২৪ পরগননার সাগরদ্বীপে।১০০-১২০ কিমি বেগে ঝড় আছড়ে পড়ে। তারপর ডায়মন্ড হারবার, কলকাতা ছুঁয়ে ঝড় উত্তরের দিকে সরে যায়।

আয়লা,
আয়লা ঘূর্ণিঝড়

‘আয়লা’ র উৎপত্তি হয় ২২মে,ওই দিন আন্দামান ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণাবাত শক্তি বাড়লে  গভীর নিম্নচাপ অতি গভীর নিম্নচাপ হয়ে একটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়। বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে তৈরি ঘূর্ণিঝড়ের নাম কী হবে,  এই দুটি সাগর সংলগ্ন ১৬ টি দেশের ট্রপিক্যাল সাইক্লোন রিজিওনাল বোর্ড তার তালিকা প্রস্তুত করে।

ঝড়ের নামকরণ :-

ভারত মহাসাগর,  আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী কতকগুলি চুক্তিবদ্ধ দেশ গুলি- ভারত, মালদ্বীপ,  ওমান, বাংলাদেশ, মায়ানমার , পাকিস্তান,  শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড,  মালয়েশিয়া প্রভৃতি যেখানে প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়গুলিকে বিভিন্ন কারণে চিহ্নিত করার জন্য ক্রমানুসারে সেখানে ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করে,  যেমন- হুদহুদ, আয়লা,  হেলেন,  বিজলি,  অগ্নি,  কোমন ইত্যাদি।  পরবর্তী ঘূর্ণিঝড় কোন দেশ নাম ঠিক করবে তাও আগে থেকে স্থির করা থাকে।

আমেরিকা ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে যেখানে  হ্যারিকেন,  টর্নেডোর প্রভাব খুব বেশি সেখানেও কয়েকটি দেশ মিলে এরকম নামকরণ ব্যবস্থা করে থাকে। ঐ দেশের ঝড়ের নামগুলি হল – রিটা,  ক্যাটরিনা  ইত্যাদি।

কয়েকটি ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত:

১) টাইফুন: জাপান চিনসাগরে সৃষ্ট এক প্রবল বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। (২) হ্যারিকেন: পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের নিকটবর্তী ক্যারিবিয়ান সাগরে উদ্ভূত বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়।

(৩) সাইক্লোন: ভারত মহাসাগর, আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতকে সাইক্লোন বলে। (৪) টর্নেডো: ক্রান্তীয়মণ্ডলে ভূপৃষ্ঠের স্বল্প পরিসর স্থান থেকে ঊর্ধ্বাকাশে প্রসারিত কালো ফানেলের মতো আকৃতিবিশিষ্ট মেঘ পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামী ও বিধ্বংসী ঘূর্ণবাত টর্নেডোর জন্ম দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটি টুইস্টার নামে পরিচিত।

ঘূর্ণিস্রোত বা জলঘূর্ণি:-

সমুদ্রে জোয়ার ভাটার প্রবল স্রোতের জন্য মাঝে মাঝে সমুদ্রের জল বৃত্তাকারে ভয়ঙ্কর বেগে ঘুরতে থাকে। সমুদ্রে জলের এই ভয়ঙ্কর ঘূর্ণনজে জলঘূর্ণি বা ঘূর্ণিস্রোত বলে। সাধারণত দুটি প্রবল স্রোত এক সঙ্গে মিলিত হলে এমন ঘূর্ণিস্রোত সৃষ্টি হয়। স্থলভাগে যেমন ঘূর্ণিবায়ুর মাঝে মাঝে প্রচন্ড প্রকোপ দেখা যায়, সমুদ্রের তেমনি জলঘূর্ণি দেখা যায়।

কুণ্ডলী বা গায়র (Gyre): প্রশান্ত, আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরের উপক্রান্তীয় অঞ্চলে উয় ও শীতল স্রোতগুলি পৃথিবীর আবর্তন সৃষ্ট কোরিয়োলিস বলের প্রভাবে বেঁকে ও পরস্পর মিলিত হয়ে যে চক্রাকার জলাবর্ত সৃষ্টি হয়, তাকে গায়র বা কুণ্ডলী বলা হয়ে থাকে। সুমেরু ও কুমেরু ছাড়া অন্য 3 টি মহাসাগরে মোট 5 টি গায়র আছে।যথা-শৈবাল সাগর।

ঘূর্ণিস্রোত বা জলঘূর্ণি
ঘূর্ণিস্রোত বা জলঘূর্ণি

কারণ: 1. জলভাগ বেশি: নিরক্ষীয় অঞ্চলে জলভাগ বেশি হওয়ায় প্রচণ্ড তাপে উৎপন্ন জলীয় বাষ্প বাতাসে মেশে।

  1. প্রখর সূর্যকিরণ : সূর্যরশ্মি সারাবছর লম্বভাবে পড়ার কারণে বাষ্পীভবনের হার বেশি হয়।
  2. নিম্নচাপের অবস্থান: লম্ব সূর্যরশ্মির কারণে এখানে সৃষ্ট স্থায়ী নিম্নচাপ অঞ্চল থেকে ঊর্ধ্বগামী আর্দ্রবায়ু পরিচলন প্রক্রিয়া সংঘটিত হতে সাহায্য করে।
  3. সর্বাধিক আপেক্ষিক আর্দ্রতা: সর্বাধিক আপেক্ষিক আর্দ্রতা বায়ুকে সম্পৃক্ত করে ঘনীভবন প্রক্রিয়ার দ্রুত সম্পন্ন করে পরিচলন বৃষ্টিপাত ঘটায়।
  4. ঘন অরণ্য: এই অঞ্চলে ঘন অরণ্যের কারণে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প বাতাসে মেশে।

পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশে হিমালয় পার্বত্য সংলগ্ন তিনটি জেলাতে প্রায়ই ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। এর কারণ (১) দার্জিলিং হিমালয়ের এই অঞ্চলটি একটি অভিসারী পাত সীমানায় অবস্থিত। এখানে ভারতীয় পাত এশীয়পাতের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত। হালকা এশিয়া পাত হালকা ও ভারতীয় ভারী পাত অনুপ্রবিষ্ট হওয়াই বেনি অফ জোনে শিলাস্তরে অসম পীড়ন, ফাটল ও ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।

(২) হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের এখনও গঠনকাজ চালু থাকায় ভূভাগ খুবই অস্থিতিশীল। প্রায়ই ভূ-উত্থান ও ভূমিধস ঘটে ভূমিকম্প হয়।

(৩) এছাড়া, দার্জিলিং পর্বতের পর্বতের ঢালে ও তরাইভূমিতে বাগিচা চাষ, রেল ও সড়কপথ নির্মাণ, বাঁধ ও জলাধার তৈরি, খনিজ উত্তোলন ইত্যাদি মানবীয় কার্যাবলি।

Thank You For Visit.

Please Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!