বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ
বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সিলেবাস ও প্রশ্নপত্রের ধরন অনুসারে অধ্যায় ভিত্তিক প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হলো। মাধ্যমিক ভূগোলের সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর যথাযথ উপস্থাপন করা হলো

বহির্জাত প্রক্রিয়ার ধারণা
বহির্জাত প্রক্রিয়া: যে সমস্ত ভূমিরূপ প্রক্রিয়াগুলি ভূপৃষ্ঠের বাইরে থেকে ভূমিরূপের পরিবর্তন ও বিবর্তনে সাহায্য করে তাদের বহির্জাত প্রক্রিয়া বলে।
বহির্জাত শক্তির উদাহরণ:
- স্থিতিশীল শক্তি: সূর্যকিরণ ,বায়ুচাপ, আর্দ্রতা, মেঘাচ্ছন্নতা, অধক্ষেপণ প্রভৃতি।
- গতিশীল শক্তি: নদী ,হিমবাহ , বায়ুপ্রবাহ ,সমুদ্র তরঙ্গ ,জোয়ার-ভাটা, হিমানী সম্প্রপাত
বহির্জাত প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য:

- এটি একটি অত্যন্ত ধীর প্রক্রিয়া।
- ভূপৃষ্ঠ এবং ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি উপপৃষ্ঠ অংশ ক্রিয়াশীল থাকে।
- বহির্জাতশক্তির মূল উৎস সৌরশক্তি।
- হয় বহন ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায়।
বহির্জাত প্রক্রিয়ায় সাহায্যকারী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নিয়ন্ত্রকগুলি হল-
i.জলবায়ু (Climate): পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে জলবায়ুগত পরিবর্তন বা তারতম্যে বহিস্থ শক্তিগুলির কার্যক্ষমতার হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে। যেমন – অতি শীতল জলবায়ু অঞ্চলে হিমবাহের কার্যাবলির সর্বাধিক প্রভাব দেখা যায়।
ii.ভূমিঢাল (Slope): ভূমিভাগের ঢালগত তারতম্যে নদী, হিমবাহ কিংবা সমুদ্রতরঙ্গের ক্ষয় ও সঞ্চয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়।যেমন খাড়া ঢালযুক্ত অঞ্চলে ক্ষয় প্রক্রিয়া দ্রুত হয়।
iii.শিলার প্রকৃতি (Nature of Rock): ভূমিরূপ গঠনকারী বিভিন্ন শিলার কাঠিন্যতা, প্রবেশ্যতা, সচ্ছিদ্রতা প্রভৃতি বহির্জাত প্রক্রিয়ার কার্যক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত ভূ-ভাগ ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমতল ভূমিতে পরিণত হয়।
আবহবিকার ও ক্ষয়ীভবনের সম্পর্ক : ভূমিরূপের পরিবর্তন ও বিবর্তনে আবহবিকার ও ক্ষয়ীভবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করলেও এরা সম্পূর্ণ দুটি ভিন্ন প্রক্রিয়া, কিন্তু একে অন্যের পরিপূরক প্রক্রিয়া। আবহবিকারে আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান দ্বারা শিলা যান্ত্রিকভাবে চূর্ণ-বিচূর্ণ ও বিচ্ছিন্নকরণ ঘটে কিন্তু সৃষ্ট পদার্থ সেই স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর ঘটে না। অন্যদিকে ক্ষয়ীভবনে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা আবহবিকার গ্রস্থ পদার্থ সমূহ অন্য স্থানে অপসারিত হয়। অর্থাৎ আবহবিকার ক্ষয়ীভবনকে ত্বরান্বিত করে, আবার ক্ষয়ীভবনের ফলে শিলাস্তার উন্মুক্ত হলে তার উপর পুনরায় আবহবিকার ঘটে সুতরাং আবহবিকার ও ক্ষয়ীভবনের পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।
1.পর্যায়ন(Gradation) প্রক্রিয়া বলতে কী বোঝো?
Ans: ক্ষয়ের শেষ তোমার সাপেক্ষে ভূপৃষ্ঠের সমতলিকরণ প্রক্রিয়াকে পর্যায়ন প্রক্রিয়া বলে।
2.গ্রেড(Grade) কথাটি প্রথম কে ব্যবহার করেন?
Ans: জি.কে. গিলবার্ট
3.পর্যায়ন(Gradation) কথাটি প্রথম কে ব্যবহার করেন?
Ans: চেম্বারলিন ও স্যালিসবুরি।
4.অবরোহন প্রক্রিয়া বলতে কি বোঝ?
Ans: যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের কোন উঁচু স্থান ক্রমাগত ক্ষয়ের ফলে ধীরে ধীরে নিচু স্থানে পরিণত হয় অর্থাৎ ভূমিরূপের উচ্চতা হ্রাস পায় তাকে অবরোহন বলে।
আবহবিকার, ক্ষয়ীভবন ও পুঞ্জিত ক্ষয় এই তিনটি প্রধান অবরোহন প্রক্রিয়া।
সৃষ্ট ভূমিরূপ: গিরিখাত, সার্ক, ভেন্টিফ্যাক্ট প্রভৃতি
5.আরোহন প্রক্রিয়া বলতে কি বোঝ?
Ans:যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষয়জাত পদার্থ ভূপৃষ্ঠের কোন নিচু স্থানে সঞ্চিত হয়ে ধীরে ধীরে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পায় তাকে আরোহন বলে।
সৃষ্ট ভূমিরূপ: বদ্বীপ, প্লাবনভূমি, বহিঃধৌত সমভূমি ,বালিয়াড়ি প্রভৃতি।
6.নগ্নীভবন কাকে বলে?
Ans: আবহবিকার+ক্ষয়ীভবন+পুঞ্জিত ক্ষয় = নগ্নীভবন ।
আবহবিকার ক্ষয়ীভবন ও পুঞ্চিত ক্ষয়ের ফলে শিলার উপরের স্তর উন্মুক্ত(নগ্ন) হয় বলে একে নগ্নীভবন বলে।
7.ক্ষয় সীমা কাকে বলে?
অথবা, ক্ষয়ের শেষ সীমা কি?
Ans: গতিশীল প্রাকৃতিক শক্তি গুলি ভূপৃষ্ঠের নিচে যতটা ক্ষয় করতে সক্ষম তাকে ক্ষয়সীমা বলে। J. W. Powell (পাওয়েল) ক্ষয়ের শেষ সীমা ধারণার প্রবর্তন করেন। ক্ষয়কারী শক্তিগুলি ভূপৃষ্ঠে যে সীমা পর্যন্ত ক্ষয় করতে পারে তাকে ক্ষয়ের শেষ সীমা বলে। সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠকে ক্ষয়ের শেষ সীমা ধরা হয়।
8.ক্ষয়ের শেষ সীমা ধারণার প্রবর্তন কে করেন?
Ans: জে. ডাব্লিউ.পোয়েল (J.W.Powell)
9.নদীর ক্ষয়ের শেষ সীমা কি?
Ans: সমুদ্রপৃষ্ঠ।
10.অবরোহন ও আরোহণের প্রক্রিয়ার সম্মিলিত ফল কি নামে পরিচিত?
Ans: পর্যায়ণ।
11.পুঞ্জিত ক্ষয় কাকে বলে?
উত্তর: আবহবিকারের ফলে উৎপন্ন শিলাচূর্ণ ও মৃত্তিকা ভূপৃষ্ঠ থেকে আলগা হয়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভূমিঢাল বরাবর ধীরে ধীরে নীচের দিকে গতিশীল বা স্থানচ্যুত হলে সেই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে পুঞ্জিত ক্ষয় বলে। এটি মূলত অভিকর্ষ বল দ্বারা সংঘটিত হয়। জল, বরফ, বাতাসের উপস্থিতিতে এটি দ্রুততর হয়। এটি চার প্রকার হয়-বিসর্পণ (Creep), দ্রুত প্রবাহ (Flow), ধস (Slide), অবপাত (Subsidence)।
শূন্যস্থান পূরণ:
1.বহির্জাত শক্তির মূল উৎস হল______
2.আবহবিকার ,ক্ষয়ীভবন ও পুঞ্চিত ক্ষয় একত্রে______নামে পরিচিত।
3.শিলা চূর্ণবিচূর্ণ ও বিয়োজন _______নামে পরিচিত।
4.অবরোহনের মাধ্যমে ভূমির উচ্চতার _______ঘটে।
5.আরোহণের মাধ্যমে ভূমির উচ্চতার ______ঘটে।
6.হিমবাহ, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্র তরঙ্গ_______ প্রক্রিয়ার উদাহরণ।
7.পুঞ্জিত ক্ষয়ে_________ বলের প্রভাব সর্বাধিক।
8.সর্বাধিক ক্রিয়াশীল বহির্জাত শক্তি হল_________।
9.পর্যায়ন হলো______ এর______ সম্মিলিত ফল।
10.আবহবিকার_______ প্রক্রিয়ার উদাহরণ।
Answer Key.1.সূর্য, 2.নগ্নীভবন, 3.আবহবিকার, 4.হ্রাস, 5.বৃদ্ধি, 6.বহির্জাত, 7.অভিকর্ষ বল, 8.নদীর কাজ, 9,অবরোহন আরোহন, 10.অবরোহন/বহির্জাত
বহির্জাত প্রক্রিয়া (M.C.Q.):
- বহির্জাত প্রক্রিয়া-এর মূল শক্তির উৎস-
(a) সূর্য (b) চাঁদ (c)সমুদ্র (d)বায়ু। - পর্যায়ন-এর অপর নাম-
(a) নগ্নীভবন (b) ক্রমায়ন শক্তি (c) ক্ষয়ীভবন (d) আবহবিকার। - ‘Grade’ (গ্রেড) শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন-
(a) গিলবার্ট (b) চেম্বারলিন (c) মূলটন (d) সলিসবেরি। - যে প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি ভূপৃষ্ঠের উপর কাজ করে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায় তাকে বলে-
(a) নগ্নীভবন (b) বহির্জাত প্রক্রিয়া (c) আরোহণ (d) অবরোহণ। - যে প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা ভূভাগের ক্ষয় ঘটে-
(a) অবরোহণ (b) আরোহণ (c) ক্ষয়চক্র (d) পুঞ্জিতক্ষয়। - যে প্রক্রিয়ায় নিম্নভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়-
(a) অবরোহণ (b) পুঞ্জিত ক্ষয় (c) নগ্নীভবন (d) আরোহণ। - গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ হল-
(a) আরোহণ (b) অবরোহণ (c) পর্যায়ন (d) আবহবিকার। - অনেক সময় আলগা মাটি ও শিলাস্তূপ অভিকর্ষের বলের টানে ভূমির ঢাল বরাবর নীচে নেমে আসলে তাকে বলে-
(a) ক্ষয়ীভবন (b) নগ্নীভবন (c) পুঞ্জিত ক্ষয় (d)কোনোটিই নয়। - বহির্জাত প্রক্রিয়া নয় এমন একটি শক্তি হল-
(a) অগ্ন্যুদ্গম (b) নদীপ্রবাহ (c) বায়ুপ্রবাহ (d) সমুদ্রতরঙ্গ। - গৌর, ইনসেলবার্জ সৃষ্টি হয়-
(a) অবরোহণ প্রক্রিয়া (b) আরোহণ (c) আবহবিকার (d) নদীর কাজ
Answer Keys: 1.(a) সূর্য , 2.(b) ক্রমায়ন শক্তি, 3.(a) গিলবার্ট, 4.(b) বহির্জাত প্রক্রিয়া, 5.(c) ক্ষয়চক্র , 6.(d) আরোহণ।, 7.(a) আরোহণ, 8.(c) পুঞ্জিত ক্ষয়, 9.(a) অগ্ন্যুদ্গম, 10.(a) অবরোহণ প্রক্রিয়া
Please Share